মেহেদী হাসান
দেশে কমে আসছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। সবকিছু এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। যে কারণে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্প ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪৪.৪২ শতাংশ।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দফায় দফায় লকডাউনের পর দেশের অর্থনীতি পুনরায় সচল হওয়ায় বেড়েছে এ ঋণগ্রহণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়কালে শিল্প ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২৪১.৩৬ কোটি টাকায়। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ হাজার ২৫৭.৪৩ কোটি টাকা।
মুলধন বৃদ্ধি এবং ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেশনগুলো তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক চাহিদা পূরণে শিল্প ঋণ নিয়ে থাকে।
করোনার সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী যখন লকডাউন ঘোষণা করে সরকার, তখন গত বছরের জুন প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ স্থগিত করেছিল অধিকাংশ ব্যাংক।
এছাড়াও, গত বছর লকডাউনের কারণে শিল্প সম্প্রসারণও থমকে যায়, যে কারণে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
যেহেতু গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকে, তাই ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা করে সরকার।
পরে আবারও ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘কঠোর’ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যা পরে দফায় দফায় বাড়িয়ে চলতি বছরের ১৬ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
দেশের ব্যাংকগুলো সাধারণত শিল্প খাতে দুই ধরনের ঋণ বিতরণ করে। একটি শিল্প মেয়াদী ঋণ, অন্যটি শিল্প কর্মক্ষম মূলধন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, শিল্প মেয়াদী ঋণ বিতরণ ৬০.১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯ হাজার ৪৩০.৭৪ কোটি টাকা এবং কর্মক্ষম মূলধন ঋণ ৪১.৩৪ শতাংশ এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকায়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আরএফ হুসেইন বলেন, এটি শিল্প ঋণ বিতরণের বৃদ্ধির প্রকৃত চিত্র নয়। কারণ, গত বছরের এপ্রিল-জুন মাসে ঋণ বিতরণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তার মতে, দেশের অর্থনীতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে, তবে পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে আসতে আরও সময় লাগবে।
যদি চলমান টিকা কার্যক্রম অব্যহত থাকে, তাহলে আগামী ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে অর্থনীতি স্বাভাবিক হবে, কিন্তু সামনের দিনগুলো অনেকটাই অনিশ্চিত বলেও মনে করেন সেলিম আরএফ হুসেইন।
সেলিমের মতোই মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও বলেন, দেশে ঋণের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ যদি দেশে আঘাত হানে, তাহলে আগামী মাসগুলোও অনিশ্চয়তায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুনে শিল্প ঋণ আদায় ২৮.২০ শতাংশ বেড়ে ৮২ হাজার ২২১.২৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
শিল্প মেয়াদী ঋণ আদায় ৪৪.৬৩ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ৭৩৪.৮৬ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন ঋণ আদায় ২৫.১০ শতাংশ বেড়েছে ৬৭ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, চলতি বছরের জুন ত্রৈমাসিকে শিল্প ঋণ আদায় বৃদ্ধির কারণ হলো- গেলো বছর ঋণ গ্রহীতারা ঋণের কিস্তি স্থগিতকরণ সুবিধা ভোগ করেছে। সেইসাথে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে তারা এখনও একই সুবিধা ভোগ করছেন।
চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে মোট বকেয়া শিল্প ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৬৪.১২ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৬৭ শতাংশ বেশি।