প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

করোনাকালে চাকরি হারিয়ে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা

১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৪২:২৫ | আপডেট: ৩ years আগে
করোনাকালে চাকরি হারিয়ে অনেকেই এখন উদ্যোক্তা

মো জয়নাল আবেদীন খান

কোভিড-১৯ মহামারি চাকরি হারানো অনেককে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে বা ২০২০-২১ অর্থবছরে উদ্যোক্তা হওয়ার দক্ষতা বিকাশে অনুপ্রাণিত করেছে।

উদ্যোক্তা বিষয়ে প্রশিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপােরেশনের (বিসিক) দুটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি- উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ।

২০২০-২১ অর্থবছরে, বিসিক ১৬ হাজার ৫৫৩ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা উন্নয়নে ৮ হাজার ৮০৩ জন এবং দক্ষতা বিকাশে ৭ হাজার ৭৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নতুন করে বাণিজ্যিক উদ্যোগ শুরু করেছে ৭ হাজার ১০ জন। আগের অর্থবছরের তুলনায় এ সংখ্যা ২১.৪ শতাংশ বেড়েছে।

বিএসআইসিআই এর তথ্যানুসারে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৭৭৪ জন। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ২০১৯ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৭৯৯ জন।

বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাক হাসান দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, আমরা চাকরি হারানোসহ বেকারদের উদ্যোক্তায় পরিণত করার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি।

তিনি বলেন, করপোরেশন বেকার ব্যক্তিদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করার জন্য প্রচার কর্মসূচি এবং মেলার আয়োজন জোরদার করেছে। এতে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।

মোস্তাক হাসান আরও বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও লোন সুবিধা বৃদ্ধি করেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মো. শাহাদ হোসেন বলেন, অনেক মানুষ যারা চাকরি বা উপার্জন করার উৎস হারিয়েছেন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যে সদস্যরা মহামারি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারাই উদ্যোক্তা হয়েছেন।

তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, যেসব কর্মহীন মানুষ, বিশেষ করে যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়াও বিএসসিআইসি এবং এসএমই ফাউন্ডেশনে নিবন্ধিত হয়েছেন ব্যবসা পরিচালনা, লোন এবং প্রণোদনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে।

বিসিক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও লোন সুবিধা দিয়ে সহায়তা করছে বলে জানান ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক।

সাবিনা ইয়াসমিন, যিনি রাজধানীর বিজয়নগরের একটি ল ফার্মে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে মহামারি আঘাত হানার পর তিনি চাকরি হারান।

তিনি প্রথমে লোন নিয়েছিলেন কিন্তু জীবনযাত্রার খরচ বহন করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

প্রোগ্রামটি সম্পর্কে জানার পর গত বছর ডিসেম্বরে সাবিনা বিসিকের বিনামূল্যে সাত দিনের প্রশিক্ষণে যোগ দেন। মাগুরায় হাঁস-মুরগির ব্যবসা শুরু করার পর তার জীবন বদলে যায়, যা তাকে এখন মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করতে সাহায্য করে।

এখন ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সরকার এবং ব্যাংকের কাছ থেকে আরও তহবিল আশা করেন বলে জানান তিনি।

জামালপুরের আলফ্রেড স্বপন বিশ্বাস ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং ঢাকায় একটি খণ্ডকালীন চাকরিতে নিযুক্ত হন। কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাকে চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়। তিনি পরে বিসিক থেকে পাঁচ দিনের উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নেন।

তিনি ৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে নিজের শহরে জৈবিকভাবে সাদা বা গোলাপী শূকর প্রজনন শুরু করেন।

আলফ্রেড বলেন, আমি জার্মানি, কোরিয়া এবং জাপানী নাগরিকদের পাশাপাশি ঢাকার কিছু কসাইকে শূকরের মাংস সরবরাহ করি।

তিনি জানান, প্রতি কেজি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় শূকরের মাংস বিক্রি করে এবং কখনও কখনও দাম প্রতি কেজি এক হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত যায়।

তিনি একটি প্রাপ্তবয়স্ক গোলাপী শূকর এক লাখ টাকায় এবং ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন সাধারণ শূকরগুলো।

তিনি আরও জানান, শূকরের মাংসে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাঘেরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রামের কিছু লোক বাণিজ্যিকভাবে এ মাংস উৎপাদনের জন্য তার কাছ থেকে গোলাপী শূকর সংগ্রহ করে।

রুপা খাতুন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জামালপুরে বিসিক উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং এরপর ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সবজি সরবরাহ শুরু করেন।

তিনি বলেন, গত বছর এপ্রিল মাসে লালমাটিয়ার একটি কলেজে ক্যান্টিন ম্যানেজারের চাকরি হারানোর পর আমি জানুয়ারিতে সবজি সরবরাহ শুরু করি। এখন আমি প্রতি মাসে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করি। যা ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে বেতনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

রূপা জামালপুরে ১৫ বিঘা লিজ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ শুরু করেন এবং ঢাকার কিছু সুপার শপে, ক্যাটারিং সার্ভিসে পণ্য সরবরাহ করেন। এখন তার ২০ জন কর্মচারী রয়েছে।

নীলফামারীর মেহের নাইজার চাকরি হারানোর পর ২০২০ সালের আগস্টে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নেন এবং নিজের শহরে উদ্যোক্তা হিসেবে কারুপন্যা বুটিক হাউস নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, ব্যবসাটি ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ভালোভাবে চলছিলো কিন্তু সরকার লকডাউন জারি করার পরে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসা বন্ধ ছিল এবং কর্মীদের বেতন, দোকান ও কারখানার ভাড়া এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে আমার জমানো টাকা খরচ করেছি।

পরে আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতদের কাছ থেকে পুনরায় ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন বলে জানান মেহের নাইজার।

তিনি বলেন, করোনা আমার চাকরি ছিনিয়ে নিলেও আমার উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।