প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

করোনাকালে বেড়েছে চোখের সমস্যা, চাঙ্গা চশমার বাজার

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৮:১৯ | আপডেট: ৩ years আগে
করোনাকালে বেড়েছে চোখের সমস্যা, চাঙ্গা চশমার বাজার
ঢাকার একটি দোকানে বিভিন্ন চশমা দেখছে এক শিশু- শামসুল হক রিপন

মোহাম্মদ নাহিয়ান

করোনা মহামারির সংক্রমণ রোধে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ দফায় দফায় লকডাউন দেয়া হয়। এতে অনেকটাই ঘরবান্দি জীবন যাপন করায় শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকেই ক্লাস কিংবা অফিসিয়াল কাজ সারতে হয় ভার্চুয়ালি।

শুধু ক্লাস আর ভার্চুয়াল নানা কাজই নয়, ঘরবন্দি সময়ে মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে অধিক সময় কাটিয়েছেন নানা বয়সী মানুষ, এতে বেড়েছে চোখের বিভিন্ন সমস্যা। ফলে এখন দেশের বাজারে বেড়েছে চশমার চাহিদা।

মানবিক সাহায্য সংস্থা’র চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ফজলুর রশিদ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোনের দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার শুষ্ক চোখের রোগ এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে। আমাদের দেশে চক্ষু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

করোনা মহামারি আর লকডাউনের কারণে এ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অনলাইন ক্লাস চালুর নির্দেশনা দেয়। সেইসাথে অফিস কিংবা ব্যবসা পরিচালনায় অনলাইনে সভা এবং প্রশিক্ষণও ভার্চুয়ালি করা হয়। যে কারণে বাড়ির বাইরে যেতে না পারায় মানুষ ইন্টারনেট এবং মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন গ্যাজেটে বেশি সময় কাটায়।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক মানুষই চিকিৎসা সহায়তা এবং চশমা নিতে বাধ্য হয়।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি শিশুকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে দেখা যায়, দৃষ্টিক্ষীণতা বা দৃষ্টিশক্তিহীনতার ঘটনা আগের ৫ বছরের তুলনায় করোনা চলাকালীন বেড়েছে ৩ গুণ ।

আরিয়ানা রহমান নামের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনাকালো ভার্চুয়ালি স্কুলের ক্লাস করেছেন। সম্প্রতি চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের বেশিমাত্রায় ব্যবহার তার দৃষ্টিশক্তির ওপর বিরূপ প্রভাবে ফেলেছে, ওই শিক্ষার্থীর বাবা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে এ তথ্য জানান।

বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় এ বিষয়ে। তিনিও একই রকম দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগছেন। তিনি জানান, মহামারী শুরুর পর থেকে আমি বাসা থেকেই কাজ করছি। এখন প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘন্টা ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ডিভাইসের সামনে কাটাতে হয়। সাধারণ সময়ে আমি বাইরে বেশি সময় ব্যয় করতাম কিন্তু এখন আমি কাজ এবং বিনোদনের জন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।

শিগগিরই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন বলেও জানান রহমান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, গোটা বিশ্বে অন্তত ২.২ বিলিয়ন মানুষের কাছের অথবা দূরদৃষ্টির সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১ বিলিয়ন সমস্যা সমাধান করতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে, যা এখনও সমাধান করা যায়নি।

ডব্লিউএইচও বলেছে, দৃষ্টিশক্তি কমার কারণে বৈশ্বিক উৎপাদনেরও বড় ধরনের ক্ষতির হচ্ছে। মায়োপিয়া এবং প্রেসবিওপিয়ার কারণে ক্ষতির পরিমাণ ধারণা করা হয় যথাক্রমে ২৪৪ বিলিয়ন এবং ২৫.৪ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ চশমা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সানা উল্লাহ খান বলেন, প্রতিবছর চশমা শিল্পের ১০-১৫ শতাংশ উন্নতি হচ্ছে।

সমিতির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক সিকদার বলেন, ক্রমবর্ধমান দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কারণে চশমার চাহিদা বেড়েছে। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারসহ আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহারও দৃষ্টিশক্তির সমস্যার জন্য দায়ী, যা চশমার বাজারে প্রভাব ফেলে।

সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি কাজী জানে আলম দ্য বিজনেস পোস্ট’কে জানান, মহামারি ও লকডাউন এ ব্যবসায় ক্ষতি হলেও এখন তা কাটিয়ে উঠছেন তারা। সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় আমাদের বিক্রি এখন ভালো; বলেন জানে আলম।

ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক চশমার বাজারের আকার ছিল ১০৫.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ থেকে ২০২৮ সালে বার্ষিক গড় ৬ শতাংশ বৃদ্ধির হারে ২০২১ এ বাজার ১১৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮ তা বেড়ে ১৭২.৪২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।