তালুকদার ফরহাদ
দেশের পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থান থাকার পরও করোনা মহামারিতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে হিমায়িত খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
আগের বছরে কোম্পানিটির মোট মুনাফা ২৪ কোটি টাকা থাকলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা নেমে আসে ৬৩ লাখ টাকায়। মহামারির কারণে আরোপিত বিধি-নিষেধে কয়েক মাস ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এ ক্ষতির মুখে পড়ে কোম্পানিটি।
প্রকাশ্যে ব্যবসা করা কোম্পানিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ১৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে মিলেছে এ তথ্য।
কোম্পানিটির সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির ব্যবসার পরিধি ১৭০ কোটি টাকা মূল্যের। যা গোটা হিমায়িত খাদ্যের বাজারের ২৯ শতাংশ।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এজি ফুড, যেটি বাজারের ১০ শতাংশ ধারণ করে।
২০২০ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে নতুন পণ্যের উদ্ভাবন, বিকাশ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্রের সংযোজনই কোম্পানিটি বাজারে তার শক্তিশালী অবস্থানের কারণ হিসেবে দেখছে।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোল্ডেন হারভেস্টের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, তারা ২০২১ অর্থবছরেও বাজারের অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, কিন্তু প্রথম নয় মাসে ১৮ কোটি টাকা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কোম্পানির সূত্রে জানা যায়, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো জুলাই-মার্চ’২১ সময়ে আয় ব্যাপক কমেছে।
ওই অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির করেছে ৩৭.৭ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম, সে সময় আয় হয় ৭৪ কোটি টাকা।
কোম্পানিটি ১৮.৫৬ কোটি টাকা লস হয়েছে বলে জানিয়েছে, এতে প্রতি শেয়ারে ক্ষতি ০.৮৫ টাকা।
আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ১৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল, যখন শেয়ার প্রতি আয় ছিল ০.৬০ টাকা।
দ্য বিজনেস পোস্টে’র এক প্রশ্নের জবাবে গোল্ডেন হারভেস্টের এক কর্মকর্তা বলেন, মহামারীর মধ্যে তাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে।
তিনি বলেন, মহামারির কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন অথবা আয় কমেছে। এতে তারা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এনেছে। যে কারণে দেশে হিমায়িত খাদ্যের বিক্রির ওপর প্রভাব পড়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকেও বিক্রি কম হওয়ার কারণ বলছেন ওই কর্মকর্তা। কারণ, শিক্ষার্থীরাই হিমায়িত খাবারের প্রধান ক্রেতা।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস যখন ঊর্ধ্বমুখি, সে সময় বিশেষ করে আইসক্রিমের বিক্রি কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে।
অবশ্য, শিগগিরই দৃশ্যপট পরিবর্তন হবে বলে আশা তার।
গোল্ডেন হারভেস্টের এক কর্মকর্তা, করোনার কারণে আরোপিত বিধি নিষেধ শিথিল করার জন্য ধন্যবাদ জানান। বলেন, কোম্পানি সম্প্রতি পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে এবং বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও মিলছে।
২০২১ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুসারে, কোম্পানির এখন ঋণের পরিমাণ ৮৮.৪৫ কোটি টাকা।
মোট সম্পদ হ্রাসের কারণে তৈমাসিকে কোম্পানিটির শেয়ারের দামও কিছুটা কমেছে।
২০২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে যে শেয়ারের দাম ছিল ১৫.০১ টাকা, সেটিই ২০২১ অর্থবছরের একই সময়ে দাম নেমে আসে ১৪.১৫ টাকায়।
যদিও, এ দরপতনের মধ্যেও কোম্পানিটির জুলাই মাসে তার শেয়ার মূল্য ২৯ শতাংশ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৮ জুলায় কোম্পানিটির যে শেয়ারের দাম ছিল ১৮ টাকা, সেটি ৯ আগস্টে এসে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩.২ টাকায়। অবশ্য, ৭ সেপ্টেম্বরে ওই শেয়ারে দাম নেমে আসে ২২.৫ টাকায়।
ডিএসইর করা প্রশ্নের জবাবে কোম্পানিটি জানায়, সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তাদের কাছে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) নেই।
গত বছরজুড়ে, কোম্পানির শেয়ার মূল্যের মূল্য ১৩.৭ টাকা থেকে ২৪.৫ টাকার মধ্যে ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর এর বাজার মূলধন ছিল ৪৭২.৬৮ কোটি টাকার বেশি।
সম্প্রতি, কোম্পানিটি একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন হার্ভেস্ট সার্ভাস-এ নতুন বিনিয়োগ করেছে এবং সার্ভাস ফুড নামের মোবাইল অ্যাপও চালু করেছে।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি খাবার, মুদি ও ওষুধ বিক্রি করবে। সেইসাথে টিকিট বুকিং আর ক্রয় পরিষেবাও দেবে।
গোল্ডেন হারভেস্ট ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের ৪৫ শতাংশ মালিক হবে। প্রাথমিকভাবে, কোম্পানিটি খাদ্য বিতরণ সেবা শুরু করবে।
নতুন চালু হওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন প্রায় ২১৬ কোটি টাকা। যেখানে অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা। এর রিজার্ভ ১০ কোটি টাকা।
শেয়ারহোল্ডারকে নিয়মিত লভ্যাংশ দেয় গোল্ডেন হারভেস্ট। ২০১৯ ও ২০১৪ অর্থবছর ছাড়া অন্য সব সময় প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের স্টক লভ্যাংশ দেয়।
নিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি অনুসারে, কোম্পানির মূল্য উপার্জনের অনুপাত (পি/ই) পুরো সময়কালে বেশ ভালোই ছিল। ৭ সেপ্টেম্বর (পি/ই) ছিল ৫৬২.৫ শতাংশ, যখন গড় বাজার (পি/ই) ছিল ১৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের হিমায়িত খাদ্য উৎপাদন শিল্পের অন্যতম পথিকৃৎ এই গোল্ডেন হারভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
হিমায়িত পণ্যের ব্যাপক পরিসরের জন্য ব্র্যান্ডটি দেশ-বিদেশে খুবেই জনপ্রিয়। এটি ঢাকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৩ সালে ।
বেশ কয়েক বছর ধরেই কোম্পানিটি রেডি-টু-কুক ফ্রোজেন ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে মার্কেটের শীষে ছিল। কোম্পানিটির রয়েছে স্থিতিশীল সাপ্লাই চেইন, ১৫৬ ডিস্ট্রিবিউটর এবং ৩৫ হাজারেরও বেশি খুচরা বিক্রেতা এর সাথে জড়িত।
গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গোল্ডেন হার্ভেস্ট গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। যেটির তথ্য প্রযুক্তি, পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি, দুগ্ধ, বিমান, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রিয়েল এস্টেটের মতো বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।