করোনা সংক্রমণের ভয় সাথে রয়েছে বাস-সিএনজি ও অটোরিক্সার দ্বিগুণ ভাড়া। সবদিক বিবেচনায় মানুষ একটু হাফ ছেড়ে বাঁচতে যেনো বিকল্প পথ খুঁজছিল। সেখান থেকেই যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরবাইক নেই তাদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাইসাইকেল। দামে কম। নেই মেইনটেনেন্স খরচ। আবার অন্যের থেকে দূরে থাকাও সম্ভব সহজে। সেজন্য সবকিছু মিলিয়ে এই লকডাউনের মধ্যে নিরাপদ চলাচলের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাহনটি।
জিম বন্ধ থাকায় অনেকে আবার শরীর চর্চার উপকরণ হিসেবেও বেছে নিয়েছেন এই অনুষঙ্গ। সেক্ষেত্রে তারা বেছে নিচ্ছেন বেশি দামের স্পোর্টস সাইকেলগুলো। বিক্রেতারা বলছেন দামি সাইকেলের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে সাইক্লিং সে কারণেও বাড়ছে চাহিদা।
গণপরিবহন এড়িয়ে ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি পণ্য ডেলিভারি দিতে বিভিন্ন অনলাইন শপগুলো এখন সাইকেল কিনছে দেদারসে। লকডাউনের মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ডেলিভারি পণ্য নিয়ে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সাইকেল নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ডেলিভারিম্যানরা। বিক্রেতাদের অভিমত এ কারণেও সাইকেলরে চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ।
বিক্রেতাদের তথ্যমতে প্রতিবছর সাইকেল বিক্রির এই হার ৩০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজধানীর তেঁজগাও লিংকরোডে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম সাইকেল বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠান সাইকেল লাইফ এক্সক্লুসিভ এর বিক্রেতা মোঃ মতিউর বিজনেস পোস্ট’কে বলেন: আমাদের সাইকেলের বিক্রি এতটাই বেড়েছে যে আমাদের প্রায় সব সাইকেল শেষ হয়ে গেছে। ক্রেতাদের অনেক চাহিদা কিন্তু আমাদের কাছে প্রোডাক্ট নেই। গত ১ মাস ক্রেতারা এত সাইকেল কিনেছেন যে এখন যারা চাইছেন তাদের চাহিদা আমরা মেটাতে পারছি না। প্রতিদিন কাস্টমারের ভিড় সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
আমাদের এখানে নিয়মিত সাইকেল থাকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এখন বেশি দামি সাইকেলগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে সর্বোচ্চ দামি যে সাইকেলটি রয়েছে তার মূল্য ৫৮ হাজার টাকা।
দোকানগুলোতে ৬ হাজার থেকে শুরু করে ১৪ হাজার টাকা মূল্যের সাইকেলগুলোর চাহিদা বেশি। দোকানীরা জানান, যারা সাইকেল কিনছেন তাদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।
কাজী আলাউদ্দিন রোডের আফিফ সাইকেল স্টোর এর ম্যানেজার শাহীন জানান: গিয়ার ছাড়া সাইকেলগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে, এক্ষেত্রে হিরো, রেনজার এসব সাইকেল বেশি কিনছে মানুষ। মেয়েদের সাইকেলের বিক্রিও বেড়েছে। প্রতি ১০০টি সাইকেলের মধ্যে মেয়েদের সাইকেল বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫টি।
এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন শপগুলো সাইকেল কিনছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, গড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ সাইকেল কিনছে বিভিন্ন অনলাইন শপগুলো।
সাইকেল শপগুলো ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী কুরিয়ারের মাধ্যমে বা হোম ডেলিভারি দিয়ে সাইকেল বিক্রি করছে। এর ফলে চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী বিক্রেতারা।
রাজধানীর মহানগর প্রোজেক্টের বাসিন্দা কায়জার হোসেন বলেন; প্রথমত সাইকেল চালানো শিখেছিলাম ছোটবেলায় শখের বশে। গ্রামে থাকায় দেখা যেতো স্কুলে যেতাম সাইকেল চালিয়ে আবার শিক্ষকদের বাসায়ও পড়তে যেতাম সাইকেল নিয়ে। কিন্তু এখন আর সাইকেলের শখ নেই। ৩৪ বছর বয়সে এসে সাইকেল হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরোপুরি প্রয়োজন। করোনার মধ্যে এখন অফিসে যেতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কায় গণপরিবহন পুরোপুরি এড়িয়ে চলছি আর সেজন্য সাইকেলই একমাত্র ভরসা। দু’সপ্তাহ হলো একটি সাইকেল কিনে নিয়েছি অফিসে যাওয়া-আসার জন্য।
আবার করোনার মধ্যে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ব্যায়াম করা জরুরী সেজন্যও অনেকে ঝুঁকেছেন সাইকেলের দিকে। তাদের মতে সাইকেলের মাধ্যমে অফিস যাতায়াত ও শরীর চর্চ া দুটোই একসাথে হয়ে যাচ্ছে।