গোখাদ্যের দাম বাড়তে থাকায় আসন্ন কোরবানিতে গরুসহ অন্যান্য পশুর দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। একই কথা বলছে, গোখাদ্য ও গরুর বাজার বিশ্লেষণও। অর্থাৎ গত বছর যে গরু ১০০,০০০ টাকায় কিনতে পেরেছিলেন কোরবানিদাতারা। চলতি বছর তা ১৩০,০০০ টাকা লাগবে। ইতোমধ্যে বাজারে গরুর দাম ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন গরু কিনছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। যা কোরবানির তুলনায় দাম কিছুটা কম। গত ১৫ দিনে খাদ্যের যে দাম বেড়েছে তা গরুর দামের সঙ্গে এখনও সমন্বয় হয়নি। আগামী ঈদের আগে এই দাম সমন্বয় হলে গরুর দাম কম পক্ষে ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে খামারিদের। অন্যথায় খামারি ও প্রান্তিক চাষিদের লোকসানে পড়তে হবে।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রান্তিক ছোট চাষীরা গরু লালন পালন করেন তৈরি ক্যাটেল ফিড, গমসহ কয়েক প্রকার ভূষি, সরিসার খৈল, খড় ও কাঁচা ঘাষ খাইয়ে। এর মধ্যে প্রতিটি খাদ্যের দামই বেড়েছে ৪০-৮৭ শতাংশ। আর বড় খামারিরা খাদ্য উপাদান কিনে নিজেরা তৈরি করে গরুকে খাওয়ান। গত এক বছরে এসব খাদ্য উপাদানের দামও বেড়েছে ৪০ শতাংশের উপরে।
বাংলাদেশ ডৈইরি ফার্মাস এসোসিয়েশেনের হিসেবে, গবাদিপশুর উৎপাদনে ৬৫.৭০ ভাগ খরচই হয় খাদ্যে। এছাড়া লেবার, ঔষধ, ইউটিলিটি বিল মিলিয়ে বাকি ২৪ শতাংশ খরচ হয়। বানিজ্যিক খাদ্য তৈরীতে প্রধান খাদ্য উপকরণ হচ্ছে সয়ামিল, ভুট্টা, এক্সট্রাকশন, চালের গুঁড়া, গমের ভূষি, ডাল ভূষি ইত্যাদি।
গত এক বছরে বাজারে সরাসরি খাদ্য ও খাদ্য উপাদের দাম বেড়েছে গড়ে ৪৬ শতাংশ। যা গরু লালন পালনের মোট খরচের ৩০ শতাংশই। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় গবাদি পশু পালনে ১০০ টাকায় ৩০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে শুধু খাদ্যেই। এছাড়া অন্যান্য খরচও বেড়েছে। সে হিসেবে খামারি ও চাষীরা যদি কমপক্ষে এই ৩০ শতাংশ খরচও সমন্বয় করেন তবে তারা লাভের আশা করতে পারবেন।
দেশের বাজার গত বছর এই সময় গমের ভূষির দাম ছিল ৩২ টাকা কেজি, যা বর্তমানে ৬০ টাকা কেজি। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৮৭ শতাংশ। ডালের ভূষির দাম ছিল ৩৫ টাকা কেজি, যা বর্তমানে ৫৫ টাকা কেজি। দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এছাড়া প্রতি মণ খড়ের দাম ছিল ৩৫০ টাকা যা এখন ৫০০ টাকা, সয়ামিলের দাম ছিল প্রতিকেজি ৪৬ টাকা এখন ৬৫ টাকা কেজি, ভুট্টা ছিল ২৪ টাকা এখন ৩৪ টাকা কেজি, সরিষার খৈল কেনা যেত প্রতি কেজি ৩৫ টাকা এখন ৫০ এবং ধানের কুড়া ছিল ১১ টাকা কেজি এখন ১৫ টাকা কেজি। গোখাদ্যের এই সাতটি উপাদন এক কেজি করে কিনতে মোট খরচ হতো ৫৩৩ টাকা যা এখন লাগছে ৭৭৯ টাকা। সে হিসেবে এসব খাদ্য উপাদানগুলোর দাম বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। এই ৪৬ শতাংশ খাদ্য মূল্য মোট খরচের ৬৬ শতাংশ হিসেবে নীতি খরচ হয় ৩০ শতাংশ বা ১০০ টাকায় ৩০ টাকা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন, আমাদের হিসেবে গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ দাম বাড়ালে বড় খামারি ও প্রান্তিক পশু পালনকারীরা লাভবান হবেন। অন্যথায় তাদের লোকসান হবে। আর খামারিরা লোকসানে পড়লে দেশের গরুর বাজার আবার বিদেশ নির্ভর হয়ে যাবে। তাই হয় গরুর দাম বাড়তে হবে অন্যথায় সরকারকে প্রাণী খাদ্যের দাম কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ:
এক বছর আগে দেশে গরুর মাংসের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা কেজি। বর্তমানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজি প্রতি ১০০ টাকা বা ১৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসেবে, গত এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, এক বছরে গরুর কেনায় খরচ বেড়েছে ২০ শতাংশ হারে। আমরা আগে যে গরু ১০০০০০ টাকায় কিনতাম তা এখন ১২০০০০ টাকার কমে কেনা যায়না। কোনবানির গরুর দাম একটু বেশি থাকে। তাছাড়া খাদ্যের দামও বেড়েছে। ফলে কোরবানির পশুর দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে বলা মুশকিল।’
ছোট পশুর চাহিদা থাকবে বেশি:
দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সে হারে বাড়েনি মানুষের আয়। গত এক বছরে চাল, ডাল তেলসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের ওপর। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এতে আগামী কোরবানির ঈদেও মানুষ পশু কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা সাশ্রয়ী হবেন বলে ধারণা ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের। এতে ছোট গরুর চাহিদাই বেশি হবে। এছাড়া দেশে মোট কোরবানির সংখ্যাও কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
মাংস ব্যবসায়ীদের হিসেবে ১২০ কেজি ওজনের গরুকে ছোট গরু ধরা হয়। আর খামারিদের হিসেবে ১২০০০০-১৫০০০০ টাকা মধ্যে গরুকে বলা হয় ছোট গরু। খামারিদের ধারণা মতে এই গরুর সংখ্যা দেশে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হবে।