প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

পশু মোটাতাজাকরণ খামার বাড়ছে

রোকন মাহমুদ
০২ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৬:০৩ | আপডেট: ৩ years আগে
পশু মোটাতাজাকরণ খামার বাড়ছে

প্রতিবেশি দেশ থেকে আমদানি বন্ধ ও কোরবানির চাহিদা বাড়তে থাকায় গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে আগ্রহ বাড়ছে খামারিদের। এতে এ খাতে বিনিয়োগও বাড়ছে দ্রুত। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, গত তিন বছরে দেশে পশু মোটাতাজা করার খামারের সংখ্যা বেড়েছে ১২ গুণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সালের আগে দেশে ডেইরি খামারগুলোতে গাভীর পাশাপাশি কোরবানিকে টার্গেট করে পশু মোটাতাজা করতেন খামারিরা। কিন্তু ৫-৭ বছরে দেশে কোরবানির সময় গরু আমদানি বন্ধ ও দেশে মাংসের চাহিদা বাড়তে থাকায় গরু-মহিষ মোটাতাজাকরণ খাতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন খামারি ও সাধারণ চাষীরা।

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে পশু হৃষ্টপুষ্ট করণ খামারের আলাদা কোনো হিসাব ছিল না। কারণ খামারের সংখ্যা ছিল খুবই কম। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের আগপর্যন্ত এ খাতের মাত্র ৪৯টি খামার নিবন্ধন নিয়ে তাদের বাণিজ্যিক উৎপাদন করে আসছিল। যার অধিকাংশই হয়েছে ২০১৫ সালের পর। বর্তমানে পশু হৃষ্টপুষ্টকরণে নিবন্ধিত খামারে সংখ্যা ৫৮৭টি। অর্থাৎ এই তিন বছরে খামার বেড়েছে ৫৩৮টি বা প্রায় ১২ গুণ। এর মধ্যে ২০১৯-২০ সালে পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার বেড়েছে ৫২টি, পরের বছর ২০২০-২১ সালে বেড়েছে ১৮৬টি, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর বেড়েছে ৩০০টি খামার।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, কোনো খামার নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১০টি গবাদিপশু থাকতে হয়। নিবন্ধিত খামার ব্যাংক ঋণ, প্রকল্প সহায়তা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে নিবন্ধিত খামার ছাড়াও পশু হৃষ্টপুষ্টকরণে অনিবন্ধিত ছোট বড় আরও অনেক খামার রয়েছে। অনেক নিবন্ধিত ডেইরি খামারেও গাভীর পাশাপাশি পশু হৃষ্টপুষ্ট করেন অনেকে। মূলত ঈদুল আজহাকে লক্ষ্য রেখেই তারা এই উদ্যোগ নেন।

জানা যায়, ২০১৯-২০ সাল থেকে গত তিন বছরে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর আধুনিক পদ্ধতিতে গবাদিপুশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮৫,০০০ খামারিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের হিসাবে কমপক্ষে ১০টি গরু রয়েছে দেশে এমন খামারের সংখ্যা ৫৬ থেকে ৫৭ হাজার। তবে দেশে ছোট বড় মিলিয়ে ১০-১২ লাখ খামারি রয়েছে বলে তারা মনে করছেন। এর মধ্যে কমপক্ষে দুটি গরু রয়েছে এমন প্রান্তিক খামারিও রয়েছেন। খামারিদের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই পুশু হৃষ্টপুষ্ট করেন বাকিরা দুধের জন্য গাভী পালন করেন।

জানতে চাইলে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা দ্য বিজনেস পোষ্টকে বলেন, দেশে গরু-মহিষ লালনপালন সব সময়ই করে আসছেন সাধারণ খামারিরা। তবে নিবন্ধন নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারের সংখ্যা বাড়ছে কয়েক বছর ধরে। কয়েক বছর আগে যখন দেশের বাইরে থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়, তখন দেশে কোরবানির সময় হঠাৎ ক্রইসিস দেখা দেয়। তারপর সরকার গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণে খামারিদের নানা ভাবে সহায়তা করে আসছে। আলাদা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া, নিবন্ধনের আওতায় এনে ঋণ পেতে সহায়তা করা ও ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনাসহ বেশ কিছু কাজ করছে। এতে খামারের সংখ্যা বাড়ছে।’

সরকারের লাইভস্টক ইকোনমির হিসাবে ২০২০-২১ সালে গবাদিপশুর সংখ্যা আগের বছররের তুলনায় ১.৪৫ লাখ বেড়েছে। এসময় গবাদিপশুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার। পাঁচ বছর আগে যা ছিল ২ কোটি ৩৯ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ এসময় দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়েছে ৬ লাখ।

খামারিরা বলছেন, একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে ঈদ-উল-আযহার পশুর জন্য ভারতের উপর নির্ভরতা ছিল অনেকাংশে। কিন্তু দেশটি থেকে পশু আসা বন্ধ হয়ে গেলে প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে কোরবানির পশু নিয়ে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়। মূলত তখন থেকেই দেশে খামারির সংখ্যা বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ভারত থেকে গরু আনা বন্ধ থাকলে দেশীয় পশুর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এতে খামারিরা ভাল দামও পান। যা প্রবাস ফেরত বেকারদেরকে এ খাতে উৎসাহিত করে। এছাড়া অনেক শিক্ষিত যুবক ভাল কোনো চাকরি না পেয়ে পশু হৃষ্টপুষ্টকরণের দিকে ঝুকতে থাকেন।

তবে চলতি বছর খামারিরা ব্যবপক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন এই খামারি। তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে করোনার কারণে। আর এ বছর খাদ্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় আবারও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। খামারিরা আদৌ মুনাফা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন- খামারের ৭০ শতাংশ কোরবানির পশু বিক্রি শেষ