ইব্রাহিম হুসাইন অভি
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান চরকা টেক্সটাইল। প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ এক শিফটের পরিবর্তে দুই শিফট চালুর মাধ্যমে আগামী দুই বছরে তাদের রপ্তানি আয় ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত নিট পোশাক প্রস্তুতকারক চরকার রপ্তানি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী শনিবার নরসিংদীর ডাঙ্গা এলাকার চরকা কারখানায় সাংবাদিকদের উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘুরে দেখান। এ সময় তিনি প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে তার এ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত সহজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, যা অন্য কোন সেক্টরে সম্ভব নয়।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় বাজারগুলো খুঁজছে, কিন্তু রপ্তানি বাজারের একটি বড় অংশ এখনও রয়ে গেছে আওতার বাইরে। আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের ব্র্যান্ড ‘প্রাণ’ নিয়ে ১৪১টি দেশে পৌঁছাতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আরএমজি ব্যবসায় যুক্ত হবার পর আমরা আফ্রিকার বাজারে প্রবেশ করেছি এবং ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি দ্বীপেও রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আহসান বলেন, ওই দেশগুলোর স্থানীয় বাজার দখল করে আমরা আমাদের রপ্তানি দ্বিগুণ করতে পারি।
কোম্পানির উৎপাদন নিয়ে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ১৩০টি উৎপাদন লাইনের মাধ্যমে এ কোম্পানি প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য রপ্তানি করছে। কারখানার বিদ্যমান সক্ষমতা ব্যবহার করে আমরা ইতোমধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে খানিকটা দুই শিফট চালু করেছি।
যদি একজন কর্মী ১২ ঘণ্টা কাজ করেন, তবে তার উৎপাদনশীলতা ভালো হবে না। এজন্য আমরা পুরোপুরি দুই শিফট পদ্ধতি গ্রহণ করার কথা ভাবছি। যেখানে একজন শ্রমিক দিনে মাত্র ৮ ঘণ্টা কাজ করবেন। তারা বর্তমানে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে প্রণোদনা ভোগ করেন এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা পেয়ে থাকেন।
একটি পূর্ণাঙ্গ ডাবল শিফট সিস্টেম চালু হওয়ার পর, চরকার সক্ষমতা বর্তমান ১৩০ এর পরিবর্তে ১৬০ লাইনে বেড়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমাদের রপ্তানি ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।
বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাকের বাজার সম্পর্কে আহসান বলেন, বাংলাদেশে অন্তর্বাস পণ্য নিয়ে রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে এবং আমাদের মোট রপ্তানি আয়ের ৩০ ভাগ আসে এ ধরনের পণ্য থেকে। আমরা এ সুযোগটি সম্প্রসারিত করতে কাজ করছি।
তবে, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের আরও উন্নতির জন্য নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। কারণ, এ সেক্টর সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজস্ব, আমদানি শুল্কের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসার সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত থাকা উচিত। কারণ, বেশিরভাগ কাঁচামলই এখন চীন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় এবং আধা-স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠান চরকা টেক্সটাইলে প্রায় ৭০০০ কর্মী কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মাসে ৭.৫ মিলিয়ন পোশাক পণ্য তৈরির সক্ষমতা রয়েছে।
এ শিল্প গ্রুপটি এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫০০ কোটি টাকা (৭০ মিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করেছে।
চরকা ফ্যাশন বিশ্বব্যাপী খ্যাতনামা প্রায় ৩০টি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঘুমের পোশাক, সাধারণ পোশাক, ব্যায়ামের পোশাক, সাঁতারের পোশাক, শিশুদের পোশাক এবং অন্তর্বাস পণ্য তৈরি করে।
চিকিৎসা সুবিধা, শিশুদের জন্য স্কুলের সুবিধা, ৫ টাকায় দুপুরের খাবার এবং ২ হাজারের বেশি শ্রমিককে আবাসিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে চরকা টেক্সটাইল।