মোহাম্মদ জাকারিয়া
করোনা মহামারির সঙ্কট কটিয়ে বাংলাদেশে আবারও গতি এসেছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে। আর এ কারণে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে ৫৩.২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৬২ বিলিয়ন ডলারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন বলছে, প্রধান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২.৬২ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ছিল ১.৭১ বিলিয়ন ডলার।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক সহায়তার বেড়েছে ৯১৫.১৮ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডি বলছে, মোট সহায়তার মধ্যে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে ২.৬২ বিলিয়ন ডলার ছাড়া হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীরা ২.৫৫ বিলিয়ন ঋণ এবং ৭৫.১৩ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে, সরকার ঋণদাতাদের কাছ থেকে ১.৬৫ বিলিয়ন ঋণ এবং ৬০.২৯ মিলিয়ন অনুদান পেয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উন্নয়ন সহযোগীরা গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২.৭৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং অনুদানের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ১.৫৩ বিলিয়ন বেশি।
২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ছিল ১.২৩ বিলিয়ন ডলারের।
এদিকে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, চীন ও ভারতের মতো দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীরা প্রতি বছর বাংলাদেশের উন্নয়নে রেয়াতি ঋণ দিয়ে থাকে।
ইআরডি’র এক সিনিয়র কর্মকর্তা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, সরকার সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। কারণ, মহামারি হ্রাস পাচ্ছে, যখন উন্নয়ন সহযোগিরা চলমান প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য ঘন ঘন ঋণ সহায়তা এবং অনুদান দিচ্ছে।
এডিবি’র সহায়তার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং সংস্থাটির প্রতিশ্রুতি চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এডিবি’র মোট ঋণের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল মহামারি মোকাবেলায় করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য।
এছাড়াও, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বিপরীতে জুলাই-অক্টোবর মাসের মধ্যে চীন ১.১২ বিলিয়ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে ৩১১.৯৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ বিতরণ করেছে।
একইভাবে, বিশ্বব্যাংক তার ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির মধ্যে ২১২.৪৫ মিলিয়ন, জাপান ৩৫৬.৫৯ মিলিয়ন এবং রাশিয়া ১৭৬ মিলিয়ন ঋণ দিয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় বিদেশি সহায়তা সরকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করেছে।
তার মতে, বাংলাদেশ পরপর দুই বছরে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক সহায়তা পেয়েছে। যা, দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। এ অর্থবছরেও এ সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
উন্নয়ন সহযোগীদের বৈদেশিক সহায়তা বিতরণের কারণে সরকার করোনা ভ্যাকসিন কিনতে কোনো আর্থিক সংকটে পড়েনি।
ইআরডি’র মতে, ২০২২ সালের জুলাই-অক্টোবর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তার মোট বকেয়া ঋণের বিপরীতে সুদ এবং মূল ঋণের ৭৪৯.১৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে। এর মধ্যে ৫৫৪.০৪ মিলিয়ন ডলার ছিল বকেয়া ঋণের মূল এবং সুদ ১৯৫.১৩ মিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৬৪৯.৯৬ মিলিয়ন ডলার।