প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা

রোকন মাহমুদ
২৫ মে ২০২২ ১৯:০৩:৫৫ | আপডেট: ৩ years আগে
চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা

চলতি বছরের বোরো মৌসুমে ভোক্তার আশা ছিলো চালের বাজারে কিছুটা সস্তি আসবে। কিন্তু চালের বাজার চলছে উল্টো গতিতে। ভরা মৌসুমেও গত ১০ দিনের ব্যবধানে রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোতে চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত। 

সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত বছর যে চাল ৫৫-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছিলো এ বছর দাম বেড়ে সে চাল ৫৮-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।

দাম কেন বাড়ছে-

চলতি বছর হাওড়ে পাহাড়ি ঢল, এর পর টানা বৃষ্টি, সিলেটে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে ধানগুলো মাঠে ছিল সেগুলোও সময় মতো কাটতে পারেনি কৃষক।

এছাড়াও শ্রমিক সংকটে ধান কাটা, মাড়াই ইত্যাদিতেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কৃষক ও মিল মালিকদের চাল উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। ফলে ধানের দাম বেড়েছে, চালের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে চাল উৎপাদনের পরিমাণও।

সবমিলিয়ে চালের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা। তবে এবার চালের দামের সাথে ধানের দামও বাড়াছে বলে দাবি করছেন তারা।

নওগাঁর জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, টানা বৃষ্টিতে এবার ধানগুলো ঠিকমতো মাঠ থেকে তোলা যায়নি। ফলে ধান সরবরাহও কমেছে। গত বছর যে ধান আমরা সর্বোচ্চ ১১০০ টাকায় মণ কিনতে পেরেছি এখন সেই ধান ১৩৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, কৃষকরা বাজারে যে ধান নিয়ে আসছে, তার অধিকাংশই ভেজা। এগুলো শুকিয়ে চাল করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এতে দু’দিকেই সমস্যা হচ্ছে- চাল উৎপাদনে সময় বেশি লাগছে এবং সরবরাহে প্রভাব পড়ছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত প্রতি বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যায় প্রায় ২৪-২৫ মণ। কিন্তু এবার ধান নষ্ট হওয়ায় ১৬-১৭ মণ পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর প্রতিবিঘা জমিতে ধান কাটতে ও মাড়াই করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা, কিন্তু এখন তা প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে কৃষি অর্থনীতিবীদ ড. জাহাঙ্গীর আলম দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ‘১০-১২টি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ৫০-৬০টি বড় চালকল রয়েছে দেশে। তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সিন্ডিকেট তৈরী করে বাড়তি দামের আশায় ধান ও চাল মজুদ করে রাখে। তাই বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বাজারে দাম বেড়েছে।

এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে গম ও চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাও পড়েছে দেশের বাজারে।

রাজধানীর বাবুবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে দেখা যায়, চলতি বছরে বোরো মৌসুম শুরু হলে ঈদুল আজহার আগেই চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমে আসে। ঈদের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত কম দামে চাল কিনতে পারেন ক্রেতারা। এর পর থেকেই চালের দাম বাড়তে শুরু করে। মিনিকেট জাতের চালের দাম কমে ৬০-৬১ টাকা কেজিতে এসেছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১০ দিনে কেজিপ্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে গতকাল মিনিকেট জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৬২-৬৬ টাকা কেজি। তার আগে দিন এ চাল ৬০-৬১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭২ টাকা কেজি। যা আগে ৬৪-৭০ টাকা ছিল। বিআর আঠাশ চালের দাম ছিল ৪৬-৪৭ টাকা কেজি। সোমবার ৪৮-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। পাইজাম কেজি প্রতি বিক্রি হতো ৪৩-৪৫ টাকা, কিন্তু এখন ৪৬-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মানিক নগরের মেসার্স সুফিয়া স্টোরের মালিক মো সাইফুর রহমান দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, পাইকারি বাজারগুলোতে চালের সংকট রয়েছে। ঈদের আগে থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৫ কেজির বস্তায় তিন দফায় ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে। শুধু এটা না, প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে।

চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁর বাজারগুলোতে ১০ দিন আগে জিরাশইল বা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল ৫২-৫৫ টাকা কেজি, কিন্তু এখন তা ৫৫-৬০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। রোপা আমন ছিল ৪০ টাকা এখন ৪৪ টাকা কেজি। কাটারি চাল ছিল ৫৮ টাকা পর্যন্ত এখন ৬২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।