তাসরিফা তৃষা
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে চাহিদা বাড়ায় বিক্রি বেড়েছে দা-বঁটির। যার ফলে আনন্দময় সময় পার করছে ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য খাবারের দোকানগুলো পুনরায় খোলার সাথে সাথে এবং মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সময় যারা রাজধানী ছেড়েছিল তারা ফিরে আসায় রান্নার এসব প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর চাহিদা বেড়েছে।
ঐতিহ্যবাহী বাঁকা ব্লেড বা বঁটি হলো রান্নায় ব্যবহৃত এক ধরনের ছুরি। সবজি, মাংস এবং অন্যান্য ধরণের জিনিসপত্র আরামে বসে কাটার জন্য এটি বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমান সময়ে সবজি কাটার বোর্ডে কাজ করার সময় সোজা ছুরিগুলো শহুরে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাঁকা ব্লেড ও ছুরির সবচেয়ে বড় বাজার হলো রাজধানীর কাওরানবাজার। নিউমার্কেট, গুলশান-১, নাখালপাড়া, চকবাজার, খিলগাঁও ও মিরপুর-১ এ একই ধরনের মার্কেট রয়েছে।
কামার ও বিক্রেতারা জানান, সাধারণত ঈদ-উল-আযহার আগে তাদের বিক্রি বেড়ে যায় এবং বাকি মাসগুলোতে বিক্রি কিছুটা কম হয়। তবে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এখন বিক্রি প্রায় ঈদ মৌসুমের মতোই হচ্ছে।
দ্য বিজনেস পোস্টে'র সাথে আলাপকালে কাওরানবাজারের বটি এবং ছুরি বিক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, গত এক বছর ধরে ব্যবসার নিম্নমুখী প্রবণতার পর আলহামদুলিল্লাহ, সাম্প্রতিক সময়ে আমি ভালো করছি এবং আমার ব্যবসা আগের রূপে ফিরে এসেছে। গত বছর আমি প্রায় আড়াই হাজার বঁটি ও ছুরি বিক্রি করেছি এবং এ বছর ইতিমধ্যে তিন হাজারেরও বেশি বঁটি ও ছুরি বিক্রি করেছি।
মোবারক হোসেনের মতো রাসেল আহমেদ, সালাউদ্দিন আলী, ইমন রহমান, রবিউল আলম, মাহফুজুর রহমানসহ ব্যবসায়ীরা বিগত বছরের তুলনায় বর্তমান সময়ে ব্যবসার অবস্থা নিয়ে খুশি।
নাখালপাড়ার আরেক বিক্রেতা হিমেল আহমেদ বলেন, আমার পরিবার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার দাদা এটি শুরু করেছিলেন, তারপর আমার বাবা দায়িত্ব নেন এবং এখন আমি আমার বড় ভাই পাভেল আহমেদের সাথে এটি চালাচ্ছি। আমাদের পরিবার এর মাধ্যমে ভালোভাবেই চলে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আমরা বাঁকা ব্লেডের আরও ২০ টুকরা তৈরি করতে পারি এবং কাস্টমাইজড ব্লেডের অর্ডারও বেড়েছে। অনেক সময় আমরা স্থানীয় কামারদের কাছ থেকেও কম দামে এসব জিনিস এনে শহরের বাজারে কিছু লাভ বাড়িয়ে বিক্রি করি।
আরেক কামার করিম বলেন, কোভিডের বিধিনিষেধ শিথিল করায় সবাই ঢাকায় ফিরছে, অনেক রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য খাবারের দোকানও খুলেছে। এর ফলে বাঁকা ব্লেড এবং ছুরির চাহিদাও বেড়েছে।
করিম বলেন, আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা এখন ভালো অবস্থায় আছি।
মিরপুর-১ এর কামার ও পাইকার নুরুল হুদা (৬৮) বলেন, গত ৩০ বছর ধরে দাউ, হাশিয়া ও বটি তৈরি করে বিক্রি করে আসছি। আমি এসব জিনিস ঢাকার মার্কেট ও অন্যত্র বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করি। মানুষ আজকাল চায়না থেকে আমদানিকৃত ছুরি এবং অন্যান্য আধুনিক কাটিং সামগ্রী ক্রোকারিজের দোকান থেকে কম দামে কিনতে আগ্রহী। কিন্তু সেগুলোর মান খুবই খারাপ। আমার ১০০ জনেরও বোশি নিয়মিত গ্রাহক রয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই কসাইখানা বা রেস্টুরেন্টের মালিক।
ধাতুর আকার, আকৃতি, তীক্ষ্ণতা এবং মানের উপর নির্ভর করে বাঁকা ব্লেড এবং ছুরির দাম ২৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
নাখালপাড়া থেকে বঁটি কিনছিলেন গৃহবধূ সালমা হক। তিনি জানান, মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই তার স্বামী চাকরি হারায়। যার কারণে তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়তে হয়েছিল। এক বছর পর তারা ঢাকায় ফিরে এসে দেখেন রান্নাঘরের সরঞ্জামাদি নেই। তাই সে বঁটি কিনছে।