মেহেদী হাসান
দ্বিতীয় ধাপে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণে গতি আনতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এখনও বেশিরভাগ সিএমএসএমই ঋণগ্রহীতা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারায় আগের ঋণই পরিশোধ করতে পারেনি এবং উচ্চ পরিচালন ব্যয়- এ দুটোকেই ঋণ কম বিতরণের পেছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন ব্যাংকাররা।
চলতি বছরের জুনে প্রথম দফার প্রণোদনা ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চলতি অর্থবছরের জন্য আরও ২০ হাজার কোটি টাকা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ প্রণোদনা কর্মসূচি তিন বছর অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ৫২টি ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৩০৩ সিএমএসএমই গ্রাহককে ৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা মোট প্রণোদনা প্যাকেজের ২১ শতাংশ।
প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ধীরগতির ঋণ বিতরণে হতাশ হয়ে এরই মধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, এটা দেখা যায় যে, ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএসএমই সেক্টরে ঋণ বিতরণের প্রত্যাশিত গতি আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং, এ খাতে কার্যকরভাবে ঋণ বিতরণের জন্য ক্রমাগত তদারকি প্রয়োজন।
এমনই প্রেক্ষাপটে, ২৮ ডিসেম্বর আসন্ন ব্যাংকার্স মিটিংয়ে এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের গতি বাড়াতে ব্যাঙ্কগুলিকে চাপ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ঋণ বিতরণের পারফরম্যান্স ভালো না হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে জরিমানা করতে পারি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে, ব্যাংক অফ সিলন ঋণ বিতরণে সর্বনিম্ন পারফরমার ছিল। কারণ, এটি তার লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩ শতাংশ বিতরণ করেছে। ৩.৯২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে এর পরের অবস্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। বেসিক ব্যাংক ৪ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ৫.৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ বিতরণ করেছে রূপালী ব্যাংক।
এছাড়াও, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৮.০২ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৯.২ শতাংশ, পূবালী ব্যাংক ৮.৭ শতাংশ; সাউথইস্ট ব্যাংক ৩.৮৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৫.২ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ৭.৯ শতাংশ, ইউসিবি ৮.৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৪.৪ শতাংশ, এক্সিম ৬.১০ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ৪.৬ শতাংশ এবং এসআইবিএল তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৯.৩৩ শতাংশ বিতরণ করেছে।
এক ব্যাংকার বলেছেন, বেশিরভাগ সিএমএসএমই এখনও আগের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি, আর এটি ধীরগতির বিতরণের পেছনে একটি কারণ।
তিনি বলেন, শিল্প ঋণের তুলনায় এসএমই ঋণের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক বেশি। এটিও ঋণ কম বিতরণের অন্য কারণ।
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণের জন্য ৯ শতাংশ সুদের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ, এ খাতে ঋণ বিতরণের ধীরগতির পেছনে প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণে যেখানে ঋণের সুদের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত, সেখানে ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৯ শতাংশ, যা ব্যাংকের জন্য লাভজনক নয়।
প্রথম দফায়, প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছিল, যা মোট প্রণোদনা ঋণের ৭৫ শতাংশ। সিএমএসএমইগুলোকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ধীর গতিতে ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরকারের নির্দেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, গত বছরের ১৩ এপ্রিলে একটি নীতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে করোনভাইরাস মহামারি প্রভাবে সিএমএসএমইগুলোকে কার্যকরী মূলধন দেয়ার জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নির্দেশিকা তৈরি করা হয়। যাতে সুদের হারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়।
সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার বহন করবে এবং বাকি ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা বহন করবে।