মেহেদী হাসান
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের শীর্ষ পাঁচটি শাখা থেকে ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির ঋণের ৭২ শতাংশই ওই শাখাগুলোতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শাখাগুলো হলো- লোকাল অফিস শাখা, জনতা ভবন করপোরেট শাখা, চট্টগ্রামের সাধারণ বিমান ভবন করপোরেট শাখা, দিলকুশা করপোরেট শাখা ও মতিঝিল করপোরেট শাখা।
গত ৪ নভেম্বর জনতার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম আজাদকে একটি চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাতে বলা হয়, আবেদনের প্রেক্ষিতে কিছু শর্তের ভিত্তিতে সমন্বয়কৃত ঋণের প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। শর্তের অংশ হিসেবে শীর্ষ পাঁচটি শাখা থেকে ঋণ না দিতে ব্যাংকটিকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি শাখায় ৪৫ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা (৭২ শতাংশ) রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রধান শাখাগুলোর ঋণের অবস্থাই বলছে, ব্যাংকটির ঋণ ঝুঁকি বাড়ছে।
জনতা ব্যাংকে বড় ঋণের পরিমাণ কমাতে বলেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, মাত্র ২৫ জন ঋণগ্রহীতাকেই ব্যাংকটি ঋণ দিয়েছে ৩৭ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ ঋণগ্রহীতার মধ্যে এরই মধ্যে চারজন খেলাপি হয়েছেন, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।
বারবার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে জনতার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম আজাদের বক্তব্য পায়নি দ্য বিজনেস পোস্ট। এ প্রতিবেদকের ফোন কিংবা টেক্সট মেসেজেরও কোনো জবাব দেননি তিনি।
এছাড়া, গত ২৫ নভেম্বর তার অফিসে গেলেও এ প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বারও এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হননি।
এদিকে, সুদমুক্ত এবং স্বল্প সুদের আমানত সংগ্রহ করে মোট সুদ আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতেও জনতাকে নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটিকে উচ্চ সুদ বহনকারী প্রাতিষ্ঠানিক মেয়াদী আমানত কমাতে এবং উচ্চ সুদ বহনকারী আমানতের নবায়ন বন্ধ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, উচ্চ সুদ বহনকারী আমানত সংগ্রহের কারণে এ বছরের জুন পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকার সুদের ক্ষতি হয়েছে।
চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো জনতা ব্যাংকের আমানত ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪৮ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
ব্যাপকভাবে আমানত সংগ্রহের ফলে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ৮২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে পরবর্তী ৯ মাসে জনতার আমানত বেড়েছে ১৭ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
জনতার আর্থিক অবস্থা
ব্যাংকিং খাতে জনতার এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৭.১৭ কোটি টাকা, যা তার মোট বকেয়া ঋণের ২২.২৩ শতাংশ। ২০১৭ সালের শেষে এ পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।
ক্রিসেন্ট গ্রুপ এবং অ্যাননটেক্সের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতাই ব্যাংকটির মন্দ ঋণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি প্রধানত কারণ।
ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করে ব্যাংকটি দুই গ্রাহককে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ দিয়েছে।
এ বছরের জুন পর্যন্ত ৩৪৫ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে জনতা ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকটি ডিফারেল সুবিধা বাবদ ৮ হাজার ৪১৯.৭৮ কোটি টাকা নিয়েছে। সুবিধা না নিলে এর মূলধন ঘাটতি হতো ৮ হাজার ৭৬৪.৮১ কোটি টাকা।