মোহাম্মদ আইয়ুব আলী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র। তথ্য-প্রযুক্তির উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতায় দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে কম্পিউটার ও অন্যান্য অনুসঙ্গের খুচরা চাহিদা। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ডওয়াগনের সাথে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় নির্মাতারাও। তাতে একসময়ের আমদানি নির্ভর বাজারে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে দেশে উৎপাদিত পণ্য।
এখনও কম্পিউটার এক্সেসরিজ বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে আমদানি করা পণ্য। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলোও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মূলত আমদানি করা পণ্যের চেয়ে দামে কিছুটা কম হওয়ায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এসব পণ্য। এসব অনুসঙ্গের মধ্যে মাউস অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন পণ্য।
১৯৯০'র দশক থেকে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মাউস শব্দটি ভিন্ন অর্থ নিয়েছিল। তখন এই হাতে ধরা পয়েন্টিং ডিভাইস যা একটি পৃষ্ঠের সাথে সম্পর্কিত দ্বি-মাত্রিক গতি সনাক্ত করে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়ে কম্পিউটারের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে মাউস এবং কম্পিউটার অঙ্গনে সর্বাধিক চাহিদাযুক্ত একক অনুসঙ্গ এটি।
বিক্রেতাদের অনুমান, বাংলাদেশে প্রতি মাসে অন্তত ৪ লাখ পিস কম্পিউটার মাউসের চাহিদা রয়েছে এবং এর বেশিরভাগই আমদানি করা হয়।
আমদানিকারক এবং বিক্রেতারা দাবি করছেন, এফোর টেক এবং লজিটেক ব্র্যান্ড দুটি বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলোর চাহিদাও ধীর গতিতে বাড়ছে।
বাংলাদেশের প্রযুক্তি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ছয়টি গেমিং মাউসসহ ৩০টিরও বেশি মডেলের মাউস এনেছে, যার মূল্য ১৭৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকা।
পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা ধীরে ধীরে মাউসকে জনপ্রিয় করে তুলছে বলে জানান বিক্রেতারা।
ওয়ালটনের চিফ বিজনেস অফিসার (কম্পিউটার এবং ডিজিটাল পণ্য) তৌহিদুর রহমান দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মাউস উৎপাদন করছে ওয়ালটন। ২০২০ সালে প্রায় ৮০ হাজার পিস মাউস উৎপাদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার পিস বিক্রি হয়েছে।
চলতি বছর দুই লাখেরও বেশি মাউস উৎপাদন করেছে ওয়ালটন। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই প্রায় দেড় লাখ মাউস বিক্রি করেছে বলে জানান তৌহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, “ওয়ালটন স্ট্যান্ডার্ড মাউস এবং গেমিং মাউসসহ ৩০টিরও বেশি মডেলের মাউস বিক্রি করে। আর সকল ধরনের মাউসের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দিচ্ছে ওয়ালটন।”
কম্পিউটার অনুসঙ্গের অন্যতম প্রধান আমদানিকারক গ্লোবাল ব্র্যান্ড লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, সারাদেশের ৩২টি আউটলেটের মাধ্যমে প্রতি মাসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দুই লাখ পিস মাউস বিক্রি করতে পারেন তারা।
বিক্রেতারা বলছেন, ব্যবহারযোগ্যতা এবং স্থায়িত্বের জন্য এফোর টেক ও লজিটেক ব্র্যান্ডের মাউসই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করছেন গ্রাহকরা।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে প্রায় ১৫টি ব্র্যান্ডের মাউস পাওয়া যায়। গুণমান ও পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করে এসব মাউসের দাম ২৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে।
তারের ঝামেলামুক্ত ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়্যারলেস মাউস। তবে এই মাউসটি কিছুটা দামী। ওয়্যারলেস মাউসের দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।
এদিকে বাংলাদেশিদের মধ্যে গেমিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর তাতে বাংলাদেশেও উচ্চমানের গেমিং মাউসের বাজার রয়েছে।
বর্তমান বাজারে রেজার (DeathAdder V2), লজিটেক (G203 Lightsync), এফোর টেক এবং র্যাপো ব্র্যান্ডের গেমিং মাউসের চাহিদা বেশি।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকা গেমিং মাউস Razer Viper Ultimate, যার দাম ৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং Razer DeathAdder Elite মাউসের দাম ৪ হাজার ৪০০ টাকা।
পরিবেশকরা জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামে তুলনামূলক বেশি দামের মাউস জনপ্রিয় এবং দেশের অন্যত্র তুলনামূলক কম দামের মাউসের চাহিদা বেশি।
গ্লোবাল ব্র্যান্ড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান বলেন, মানুষ বিশেষ করে তরুণরা আইটি সেক্টরে প্রবেশ করায় কম্পিউটার ও আইটি এক্সেসরিজের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
কোম্পানিটির সিনিয়র ম্যানেজার (প্রোডাক্ট) মো. নাজিমুদ্দিন জানান, তারা তিনটি ব্র্যান্ডের মাউস আমদানি করেন এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে এফোর টেক ব্র্যান্ডের মাউস বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
লজিটেক কম্পিউটারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) সাইফুল ইসলাম বলেন, তারা মাসে ১০ হাজারের বেশি মাউস বিক্রি করেন।
রায়ান্স কম্পিউটারের ব্যবস্থাপক (ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বিভাগ) এস এম আরিফুজ্জামান বলেন, বাজারে ১৫-২০টি ব্র্যান্ডের মাউস পাওয়া যাচ্ছে। তবে গ্রাহকদের মধ্যে মাউসের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হচ্ছে এফোর টেক।
ব্র্যান্ডেড মাউসের পাশাপাশি, কিছু নন-ব্র্যান্ড মাউসও বাজারে পাওয়া যায় এবং তাদের বেশিরভাগই আমদানি কিংবা স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দ্বারা একত্রিত করা হয়।
মাউস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান স্টার টেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রোডাক্ট ম্যানেজার মো. নিরব জানান, তারা সাধারণত প্রতি মাসে গেমিং মাউস সহ ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার পিস মাউস বিক্রি করেন এবং বাজারে এফোর টেক এবং লজিটেক ব্র্যান্ডের আধিপত্য রয়েছে।
ল্যাপটপের টাচপ্যাড ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করায় ল্যাপটপের জন্য মাউস কিনতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে আসা মো. সাইদুর রহমান জানান, ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে এফোর টেক বা লজিটেক ব্র্যান্ডের মাউস পছন্দ করবেন তিনি।