প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

জ্বালানি খাতে ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত

আশরাফুল ইসলাম রানা
২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:০০:৩৬ | আপডেট: ২ years আগে
জ্বালানি খাতে ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত

জ্বালানি খাতে ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে প্রতি তিন মাস অন্তর বিশ্ব বাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে সম্প্রতি এই বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব বলেছেন, জ্বালানির দাম নির্ধারণের জন্য এলপিজির দাম সমন্বয় মডেল অনুসরণ করার কথা বিবেচনা করছে সরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করলেও প্রতি তিন মাস অন্তর জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হবে।

এলপিজি আমদানিকারকদের খরচ ও কমিশন গণশুনানির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করা হয়। এখন প্রতি মাসে শুধু এলপিজির দাম সমন্বয় করা হয়। 

এনার্জি ডিভিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন এবং অন্যান্য ধরনের জ্বালানির দাম সামঞ্জস্য করার জন্য এলপিজি দাম সমন্বয় পদ্ধতির কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

তারা বলছে, পরিচালন এবং আমদানির খরচ আলাদা করা হবে।

তারা আরও বলেছে, অপারেটিং খরচ অপরিবর্তীত থাকবে যখন জ্বালানির দাম প্রতি তিন মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারের দাম হার অনুযায়ী বাড়বে বা কমবে।

এছাড়া তারা আরও বলছে, শীঘ্রই বিইআরসি প্রবিধান সংশোধন করা হবে, সেখানে কমিশনই আইনত জ্বালানির দাম সমন্বয় করতে পারে।

২০১২ সালে প্রবিধান সংশোধনী প্রস্তাব বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও তা এখনো ঝুলে আছে। তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

কয়েক মাস ধরে গুজব চলছিল সরকার জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করতে চায়। এ বিষয়ে সরকার প্রধান সম্প্রতি বলেছেন, সরকার এতদিন জ্বালানিতে ভর্তুকি দিয়েছিল কারণ তখন টাকা ছিল।

“তবে করোনভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে এর প্রভাব পড়েছে। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাস ভর্তুকিও থাকবে না। প্রত্যেককেই প্রকৃত মূল্য দিতে হবে।”

অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার কয়েক দফা জ্বালানির বাজার বেসরকারি খাতে খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে।

“সেখানে বেসরকারির পাশাপাশি সরকারি কোম্পানি থাকতে পারে। এমন একটি মেকানিজম চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানেও দাম বাড়বে আবার কমতেও পারে। সরকার আর জ্বালানিতে ভর্তুকি দিতে চায় না।”

অনেক বিশেষজ্ঞ জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, “সরকার বলছে তারা জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়, কিন্তু জ্বালানি কর এখনও বেশি।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) মুনাফা করছে কর থেকে।

“যখন বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়ে, তখন এখানে করও বেড়ে যায়। আমাদের প্রস্তাব হলো জ্বালানির পরিমাণের ওপর কর আরোপ করা, দামের ওপর নয়। যদি তা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম ওঠানামা করলেও এখানে করের তারতম্য হবে না।”

বর্তমানে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্বাহী আদেশে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত বিপিসি শুধুমাত্র তেল আমদানি করে এবং তার তিনটি সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করে - পদ্মা, যমুনা এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম।

বিপিসির মতে, পেট্রোলের স্থানীয় চাহিদার ৬০ শতাংশ আমদানি করে এবং অকটেন অভ্যন্তরীণ গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যায়।

এছাড়া বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ ডিজেল আমদানি করতে হয়। জ্বালানির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ডিজেল এবং পেট্রোল প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে মেটানো হচ্ছে।

সরকার প্রতি বছর আরও তিন মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের লক্ষ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

বিপিসি বলেছে, ২০২১ অর্থবছরে জ্বালানির অভ্যন্তরীণ চাহিদা, বেশিরভাগই পরিবহন, কৃষি, শিল্প এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাহিদা ছিল ৬.৯৯ মিলিয়ন টন।

এই বছরের আগস্টে, সরকার জ্বালানির দাম রেকর্ড ৪২ শতাংশ বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মুদ্রাস্ফীতি ৮.৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।