প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

টেডি বিয়ার বাজারের ৮০ শতাংশ দেশীয়

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:২৭:৪১ | আপডেট: ৩ years আগে
টেডি বিয়ার বাজারের ৮০ শতাংশ দেশীয়

আব্দুর রাজ্জাক সোহেল

শিশু-কিশোরদের মধ্যে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশে তৈরি নরম খেলনা; সাধারণত যেটা টেডি বিয়ার নামে বেশি পরিচিত। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতোমধ্যেই দেশীয় বাজারে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে দেশীয় এ শিল্প।

এক দশক আগেও টেডি বিয়ারের দেশি চাহিদা মেটাতে চীন ও থাইল্যান্ডের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু বর্তমানে এ খেলনার ৮০ ভাগই দেশীয় শিল্পের দখলে।

বাংলাদেশ পান্ডা ম্যানুফ্যাকচারার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমওএ) মতে, গত কয়েক বছরে এ শিল্পের বার্ষিক অগ্রগতি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে হিসেবে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দেশীয় বাজারের ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে।

দ্য বিজনেস পোস্ট'র সাথে আলাপকালে স্টক হোল্ডাররা বলেন, উপহার হিসেবে টেডি বিয়ারের জনপ্রিয়তা এ শিল্পের ক্রমাগত উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে।

এছাড়া বিভিন্ন আকার, রঙ এবং গুণগত মানের নান্দনিক ডিজাইনসহ সাশ্রয়ী মূল্যে এসব টেডি বিয়ারের প্রাপ্যতা এ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের কম্পিউটার অপারেটর মো. সজিব হাসান বলেন, আমার ভাতিজা অন্যান্য খেলনার চেয়ে টেডি বিয়ার পছন্দ করে। আমি তার জন্য দেশে তৈরি একটি টেডি বিয়ার কিনেছি। কারণ এটি আমদানি করা পুতুলের তুলনায় দামে যেমন কম, তেমনি চমৎকারভাবে তৈরিও করা হয়েছে।

সারা বছরই টেডি বিয়ারের চাহিদা থাকে। তবে বিশেষ দিনগুলো যেমন- ভ্যালেন্টাইনস ডে, ঈদ এবং স্থানীয় মেলায় বেশি বিক্রি হয়।

বাংলাদেশ পান্ডা ম্যানুফ্যাকচারার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমওএ) সভাপতি জহির রায়হান বলেন, ২০১০ সালের আগে এসব খেলনার জন্য চীন এবং থাইল্যান্ডের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অবস্থা পাল্টে গেছে। এখন আমরাই দেশীয় বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছি।

এ শিল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে তৈরিকৃত এসব নরম খেলনার বার্ষিক বাজার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

দিনদিন এর চাহিদা ব্যাপক বাড়ছে জানিয়ে রাজধানীর চকবাজারের ড্রিমস কালেকশনের মালিক দীপক মণ্ডল লিখন বলেন, কয়েক বছর আগেও আমাদের টেডি বিয়ার বিক্রি হতো মাত্র ৫০ হাজার টাকার। কিন্তু এখন প্রতি মাসে বিক্রি বেড়ে দেড় থেকে ২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

দেশে প্রায় দেড়শ নরম খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার বেশিরভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থিত।

যদিও ক্রমবর্ধমান এ খাতটি এখনো ফাইবার, উল কাপড় ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের মতো কাঁচামাল আমদানির উপর নির্ভরশীল। এর বেশিরভাগ কাঁচামাল আসে চীন থেকে।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, তারা কাঁচামাল আমদানির উপর থেকেও নির্ভরতা কমাতে পারবেন। কারণ চীনা ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল সরবরাহের জন্য দেশেই কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

এ খাতটি এখন পর্যন্ত ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং ৫০ হাজারেরও বেশি লোক পরোক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত বলে জানান উদ্যোক্তারা।

দেশে এখন ২০০ টিরও বেশি নরম খেলনা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- টেডি বিয়ার, নরম পুতুল, মিনি পান্ডা, লাভ পান্ডা এবং বিড়াল, বাঘ, হরিণ, সিংহ, প্যান্থার এবং খরগোশের খেলনা।

চীন কিংবা থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত এসব নরম পুতুলের চেয়ে দাম প্রায় অর্ধেক হওয়ায় দেশে তৈরি টেডি বিয়ারের চাহিদা বেশি বলে জানান সংশিষ্টরা।

তিন দশক ধরে ব্যবসা করে আসা সম্রাট এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান বলেন, ক্রেতারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য পছন্দ করেন। কারণ দেশে তৈরি এসব পণ্য আমদানি করা পণ্যের তুলনায় অনেক সস্তা। ডিজাইনও ভালো।

তিনি আরও জানান, আমরা প্রতি মাসে অন্তত ২ লাখ দেশীয় পণ্য বিক্রি করতে পারি, যেখানে আমদানিকৃতগুলো বিক্রি হয় মাত্র ১ লাখ। চীন ৩০০ টাকায় যে পুতুলটি বিক্রি করে, সেটা দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১০০ টাকারও কমে উৎপাদন করতে পারে।

সুপার শপ আর উপহারের দোকানেও মিলছে স্থানীয় টেডি বিয়ার

ক্রমাগত চাহিদা বাড়ায় দেশে উৎপাদিত এসব টেডি বিয়ার এখন পাওয়া যাচ্ছে দেশের সুপার শপ আর উপহারের দোকানেও। তবে এসবের মান আমদানিকৃতগুলোর চেয়ে কিছুটা খারাপ বলছেন কেউ কেউ।

স্বপ্ন সুপার শপের সহকারী ব্যবস্থাপক রাইসা ফারহিন খান বলেন, বাংলাদেশে টেডি বিয়ারের বিশাল চাহিদা রয়েছে। যদিও দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলোর গুণগত মান চীন কিংবা থাইল্যান্ডের পণ্যগুলোর মতো নয়। তবে তুলনামূলক দামে কম হওয়ায় করোনা মহামারির আর্থিক সঙ্কটের সময়েও দেশীয় পণ্যগুলো বাজার সৃষ্টি করতে পেরেছে।

স্থানীয়ভাবে তৈরি পণ্যের চাহিদার বিষয়ে একই কথা জানালেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সপ্নিল সুপার শপের পরিচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা এই সুপার শপের ব্যবসা শুরু করেছি। বাচ্চাদের খেলনা আর উপহার সামগ্রী হিসেবে ভালো চাহিদা থাকায়, টেডি বিয়ারও রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।