প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ডিএসইতে ৭ বছরের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সর্বনিম্ন

নিয়াজ মাহমুদ
২০ আগস্ট ২০২২ ১৩:০৪:৩৮ | আপডেট: ২ years আগে
ডিএসইতে ৭ বছরের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সর্বনিম্ন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলিতে বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহত ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগ ২০২২ সালের জুন মাসে সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

আইডিএলসি ফাইন্যান্স’র আগস্টে প্রকাশিত মাসিক ব্যবসায়িক পর্যালোচনার তথ্য মতে, চলতি বছরের জুনের শেষে ডিএসইতে বিদেশী মালিকানায় মোট ইকুইটি বাজার মূলধনের অবদান ৩.৯ শতাংশে। যা ২০১৫ সাল থেকে রেকর্ড করা হয়নি এমন একটি চিহ্নের নীচে নেমে গেছে। সাত বছরের মধ্যে ইক্যুইটি বাজার মূলধনের মোট বিদেশী মালিকানা ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৬.৮ শতাংশে পৌঁছেছিল।

বুধবার ডিএসই মার্কেট মুলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে, ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৩৬.১ শতাংশ বিদেশী শেয়ার ছিলো। এ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মায় বিদেশী বিনিয়োগ ছিলো ২৮.৬ শতাংশ।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ’র বিদেশী মালিকানায় রয়েছে ২৫.৭ শতাংশ। এরপর রেনাটা লিমিটেড’র ২২.৯ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক’র ২০.৬ শতাংশ, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন’র (ডিবিএইচ) ১৯.৩ শতাংশ, বিএসআরএম লিমিটেড’র ১৭.৫ শতাংশ, স্কয়ার ফার্মা’র ১৩.৯ শতাংশ, রিং শাইন টেক্সটাইল’র ১০.২ শতাংশ এবং শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র ৯.৪ শতাংশ।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার অস্থিরতা বিরাজ করছে। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন এবং মুদ্রার বাজারে অস্থিরতার কারণে কিছু সংখ্যক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারি তাদের উৎসাহ হারিয়েছে।

পাশাপাশি পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতের অস্থিরতা শেয়ার বিক্রির বড় কারণ হতে পারে বলেও জানান তারা।

সাম্প্রতিক, বিনিয়োগকারীরা করোনা মহামারী, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন, বহিরাগত ঋণ নিয়ে উদ্বেগ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহে বিঘ্নসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লড়াই করছে।

এ দিকে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ২০২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূত্রমতে, ২০১১ সালের পর থেকে ২০১৯ অর্থবছরে প্রথম পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছিলো। এখনও এ ধারাবাহিকতা বিদ্যমান।

বাজার বিশ্লষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, যে পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাবের সাথে ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির একটি সিরিজও পোর্টফোলিও বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেছে।

দেশর শীর্ষ এক স্টক ব্রোকার দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেছেন, ‘আইপিও প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক বাজারের কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাবের কারণে ভালো মৌলিক সংস্থাগুলি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত খুব কম (সাত থেকে আট) কোম্পানি রয়েছে যেখানে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’

দেশের প্রিমিয়ার শেয়ারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিট বিনিয়োগ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪৯৪ কোটি টাকা ছিলো।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই সুশাসনের অভাবে ভুগছে। এই কোম্পানির স্পন্সর ডিরেক্টররা প্রায়ই বেনামে শেয়ার লেনদেন করে, সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে।’

তিনি বলেন, ‘তারা মিথ্যা আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে। সেক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে না। ভালো কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করা, তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজ করা এবং সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসা বাজারের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।’

দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ ছিল ২০১৪ সালে। এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।