প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ

ডিজিটাল যুগেও জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী কার্ড-ক্যালেন্ডার

০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:০৯:৩৬ | আপডেট: ৩ years আগে
ডিজিটাল যুগেও জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী কার্ড-ক্যালেন্ডার

মোহাম্মদ নাহিয়ান

আবারও জনপ্রিয়তা বাড়ছে ঐতিহ্যবাহী ক্যালেন্ডার, আমন্ত্রণ কার্ড আর নোটবুকের। কারণ, প্রিয়জন কিংবা সামাজিক মানুষদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যম খুঁজছে মানুষ। এছাড়া, ব্যবসায়িক নানা কাজেও বাড়ছে এসব পণ্যের ব্যবহার।

ডিজিটাল আমন্ত্রণের পরিধি বৃদ্ধি সত্ত্বেও কাগজের এসব আইটেম দিয়ে কাউকে শুভেচ্ছা জানানো এবং উপহার দেয়া ঐতিহ্যগত বিষয় হওয়ায়, ফের বাড়ছে চাহিদা। যদিও মহামারির কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এ খাতেও।

তবে, করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠায় এসব পণ্যের ব্যবসা আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, এ খাতটি অনেকটাই আনন্দ এবং বিনোদনের ওপর নির্ভরশীল। কাউকে শুভেচ্ছা জানানোর আনুষ্ঠানিক মাধ্যম হলো- কার্ড ও উপহার পাঠানো।

দোকানগুলো এখন পুরোপুরি খোলায় এসব পণ্যের বিক্রিও বেড়েছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের নিয়ে বিয়ে, জন্মদিন উদযাপন এবং অন্যান্য কর্পোরেট ও অফিসিয়াল বিষয়গুলোতে এসব পণ্যের প্রয়োজন পড়ছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, বর্তমানে এ খাতে প্রায় ১৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

দ্য বিজনেস পোস্ট’র সাথে আলাপকালে আজাদ প্রোডাক্টস’র ব্যবস্থাপক দেবাশীষ সরকার বলেছেন, মানুষ মূলত কাগজের আমন্ত্রণপত্র ব্যবহার করে। কারণ, এটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতি এবং অনলাইনে আমন্ত্রণের চেয়ে আরও বেশি আনুষ্ঠানিক।

তিনি বলেন, আমরা এখন ২০২২ সালের নতুন বছরের ডেস্ক ক্যালেন্ডারসহ বিভিন্ন আকারের ক্যালেন্ডার তৈরি করার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছি।

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় ৩০টির বেশি দোকান রয়েছে। এ ধরনের স্টেশনারি আইটেমের উচ্চ চাহিদার কারণে এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা দেশে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতে জড়িত।

আইডিয়াল প্রোডাক্টের অ্যাকাউন্টস অফিসার মো: হুমায়ুন কবির বলেন, শাটডাউনের সময় তাদের বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তবে করোনা অনেকটাই চলে যাওয়ায় এখন তারা ভাল করছেন।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ডিজাইনের বিয়ের কার্ডের ব্যাপারে আমাদের অনেক সুনাম রয়েছে, যা আমাদের বিক্রি বাড়াচ্ছে। সেই সাথে শীত ঘনিয়ে আসায় আমরা বিয়ের কার্ডেরর প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি।

বর্তমানে বাজার মেরুন বিবাহের কার্ড, উইন্ডো লেজার-কাটিং বিয়ের কার্ড, গোল্ড-ব্লাক বিয়ের কার্ড, গোল্ড-ব্লু বিয়ের কার্ড, গোল্ড-রেড বিয়ের কার্ড, ক্রিমি বিয়ের অভ্যর্থনা কার্ড, গোল্ডিশ ফিতাসহ বিয়ের কার্ড, ওলিভস বিয়ের কার্ড, পেস্ট ফিতা কার্ড, রয়েল ব্লু বিয়ের কার্ড, হোয়াইট রিবন কার্ড, ফ্রেম লেজার বিয়ের কার্ডসহ অন্যান্য এমন কার্ডের চাহিদা রয়েছে।

আনন্দ প্রোডাক্টস’র পরিচালক ফাহসিন আনন্দ বলেন, আমাদের ব্যবসা ফিরে এসেছে। বর্তমানে অন্যান্য আইটেমের তুলনায় ক্যালেন্ডার ও ডায়েরির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের কাছে বিয়ের কার্ডেরও বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। আমরা চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং তাইওয়ান থেকে নোটবুক আমদানি করি।

তিনি বলেন, বিয়ের কার্ডের প্রায় ৭০ শতাংশই চীন থেকে আমদানি করা হয়। শুধুমাত্র কয়েকটি কোম্পানি দেশীয় বাজারের জন্য বিয়ের কার্ডের কাগজ সরবরাহ করে, কিন্তু চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট নয়।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে গ্রিটিং কার্ড ও ক্যালেন্ডারের বর্তমান বাজারের আকার ১ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

বার্ষিকী কার্ড, জন্মদিনের কার্ড এবং অভিনন্দন কার্ডসহ গ্রিটিং কার্ডের চাহিদা গ্রামীণ এলাকায় বাড়ছে।

আবদুর রহিম নামে এক গ্রাহককে ক্যালেন্ডার কিনতে দেখা গেছে। ক্যালেন্ডার কেনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি ওয়াল ক্যালেন্ডার কিনতে এসেছি। কারণ, এটি তারিখ এবং দিন দেখার পাশাপাশি আমার ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ায়।

আরেক ক্রেতা সালেহ আদনান বলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের সুন্দর ডিজাইন করা কার্ডের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। ।

কোম্পানির আর্থিক তথ্য, ব্যবসার খবর, বিশ্লেষণ এবং স্টক মার্কেট তথ্য প্রদানকারী মার্কেটওয়াচের মতে, ওয়াল ক্যালেন্ডার মার্কেট ২০২১ আগামী ৫ বছরে রাজস্বের পরিপ্রেক্ষিতে ৩.৪ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক বৃদ্ধির হারে (সিএজিআর) পৌঁছাবে, এবং ২০২৬ সালের মধ্যে বৈশ্বিক বাজারের আকার ২১৩.২ মিলিয়নে পৌঁছাবে।

দেশীয় বাজারের মূল প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশে তৈরি কার্ড রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে বিশ্ব বাজার খুজে বের করার এখন সময় এসেছে।