মেহেদী হাসান
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) নন-পারফরমিং লোন (এনপিএল) আদায়ের হার কমেছে ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, এ তিন মাসে ১ হাজার ৭৯৫.১২ কোটি টাকার মন্দ ঋণ আদায় করেছে ব্যাংকগুলো। যা আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ছিল ১ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অবশ্য এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে (Q2) মন্দ ঋণ থেকে ২৭৯.৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে। যা প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি-মার্চ) চেয়ে ৩৩.৫৮ শতাংশ কম। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের ঋণগ্রস্ত গ্রাহকরা ৫৩১.৮০ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যা তিন মাস আগে প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে (Q1) ২৯ শতাংশ কম।
যদিও, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পুনরুদ্ধার ৩২.৬৯ শতাংশ বেড়ে ৯৩৭.৩৭ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকের মন্দ ঋণ থেকে পুনরুদ্ধার ৭৪.৩২ শতাংশ বেড়ে ৪৬.১১ কোটি টাকা হয়েছে।
ব্যাংকাররা বলেন, করোনা মহামারির কারণে সব স্থবির হয়ে পড়ায় ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা অনেকটা প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু আমরা খারাপ ঋণ আদায়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, মহামারির সময় বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল এবং তারা ভালো মুনাফাও অর্জন করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ স্থগিতকরণ সুবিধা বাড়ানোয় তারা এখন ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করছে না।
ঋণ গ্রহীতারা ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ঋণের কিস্তি স্থগিতকরণ সুবিধাটি উপভোগ করেছেন। বর্তমানেও তারা শর্ত সাপেক্ষে এ সুবিধা ভোগ করছেন।
২ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোন ঋণ গ্রহীতা চলতি বছরের ঋণের তাদের কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করে, তাহলে তারা ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি হবে না।
এপ্রিল-জুন সময়কালে ব্যাংকগুলো শ্রেণিবদ্ধ ঋণ থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ ৭৭৫.০৬ কোটি টাকা এবং রিট-অফ ঋণ থেকে ১২৭.৩৮ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে কিছু মন্দ ঋণও উদ্ধার করা হয়েছে।
বেলুনিং খেলাপি ঋণের মধ্যে ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের মধ্যে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ২ হাজার ৯১৫.২২ কোটি টাকার পুনঃতফসিল করেছে।
যোগাযোগ করা হলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, খারাপ ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল করছে। কারণ, চলমান মহামারির কারণে ভবিষ্যত খুবই অনিশ্চিত।
তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক নগদ প্রবাহের উপর নির্ভর করে তাদের খারাপ ঋণের পুনঃতফসিল করে।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন ঋণ গ্রহীতারাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসাবে তাদের খারাপ ঋণ পুনঃতফসিল করতে আগ্রহী। কারণ, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে স্থগিত সুবিধা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুনের শেষে, মন্দঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ১৬৪.৩১ কোটি টাকা, মোট বকেয়া ঋণের ৮.৬১ শতাংশ।