ঈদুল ফিতরের এখনও বাকি প্রায় ২৪ দিন। ইতোমধ্যে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, পাজামা, ফতুয়াসহ ছেলে ও মেয়েদের তৈরি পোশাকের ঈদের বেচা-কেনা শুরু হয়েছে পাইকারি ও খুচরা মার্কেটগুলোতে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় বিক্রি আশানুরূপ নয় বলে দাবি বিক্রেতাদের। বড় হোলসেলারদের বিক্রি কিছুটা ভাল হলেও ছোটেদর বিক্রি গত বছরের তুলনায় কম।
সোমবার রাজধানীর শাহবাগ আজিজ মার্কেট, সদরঘাটের পাইকারি পোশাকের বাজার ও দক্ষিণ কেরানিগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
তারা জানিয়েছেন, পোশাকের পাইকারি বাজারগুলোতে সাধাণত রমজানের ১৫ দিন আগে থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত ৪৫ দিনের একটি পিক টাইম থাকে। এর মধ্যে সিংহভাগ বিক্রি হয় প্রথম ৩০ দিন। এসময় পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা কিনে দোকান সাজাতে থাকেন। কারণ প্রথম রোজা থেকেই খুচরা বাজারে সাধারণ ক্রেতারা ঈদের কালেকশন খুঁজতে থাকেন।
তবে এ বছর চিত্র কিছুটা ব্যতিক্রম, একদিকে বিক্রি শুরু হয়েছে কিছুটা দেরিতে অন্যদিকে আশানুরূপ পরিমাণে তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে না। যেহেতু পিক টাইমের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে, সে হিসেবে ৫০ শতাংশ বিক্রি শেষ হয়েছে। তবে এসময় বড় পাইকারদের বিক্রি কারো কারো গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভাল হলেও অনেকের একই রকম রয়েছে। আর ছোট ছোট পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন গত বছরের তুরনায় তাদের ব্যবসা কমেছে।
তারা বলছেন, গত বছর করোনার কিছুটা প্রভাব ছিল যা এবার একেবারেই নেই। তাই আশা ছিল এবার বিক্রি অনেক ভাল হবে। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্যাশন হাউসগুলোর উৎপাদন খরচও কিছুটা বেড়েছে। যা পণ্যের দামের উপর পড়েছে। ফলে খুচরা বিক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে এগুচ্ছেন।
সোমবার আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন দোকানের সামনে কার্টনে বাধা রয়েছে প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি ও পাজামা সহ বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর তৈরি পোশাক। অনেক দোকানের সামনে খুচরা বিক্রেতারা পণ্য কিনে নতুন কার্টন সাজাচ্ছেন। অনেক ফ্যাশন হাউস মোবইল ফোনে অর্ডার নিয়ে কুড়িয়ারের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করছেন।
মার্কেটের সুই সুতা নামে দেশীয় একটি ফ্যাশন হাউসের বিক্রয়কর্মী মো. রবিউল রবি বলেন, শবে বরাতের পর থেকেই আমাদের পাইকারি বিক্রি শুরু হয়েছে বিভিন্ন পোশাকের। এখনও কিছু কিছু অর্ডার আসছে। তিনি একটি কার্টন দেখিয়ে বলেন, আজ আমাদের কাছে ২০টি পাঞ্জাবি ও ৮০টি পাজামার অর্ডার দিয়েছেন এক খুচরা বিক্রেতা, যা তিনি কুরিয়ারে নিবেন, ইতোমধ্যে আমরা প্যাকেট করে রেখেছি।’
‘আশা ছিল রোজার শুরুতে আমাদের আরও বেশি বিক্রি হবে। কিন্তু গত বছর করোনা সত্বেও যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছিল এ বছর একই রকম রয়েছে। অথচ পাইকারি বিক্রির প্রকৃত সময় আর মাত্র ১০ দিনের মত রয়েছে।’
মার্কেটের প্লাস পয়েন্ট, মুয়াদ, ডান ফ্যাশনসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে কিছু খুচরা ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে ঈদের কালেকশন দেখছেন। পছন্দ হলে কেউ কেউ কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।
মার্কেটের প্লাস পয়েন্টের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, “শবে বরাতের পর থেকে রোজা শুরুর আগ পর্যন্ত ঈদের স্বাভাবিক বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন আবার বিক্রি কমে গেছে। তবে গত বছর করোনার কারণে আমাদের ঈদ কালেকশন অনেক কম ছিল তাই বিক্রিও কম হয়েছে। কিন্তু এবার ঈদের ১৮-২০ ধরনের ঈদ কালেকশন রয়েছে, পণ্যের পরিমাণও বেশি তাই এবার সিজন শেষে বিক্রি গত বছরের তুলনায় বেশি হবে বলেই আশা করছি।”
মুয়াদ নামের আরেকটি ফ্যাশন হাউজের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার রিফাত আহমেদ বলেন, এবার পণ্যের দাম পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কিছুটা বেড়েছে। গত বছর যে প্যান্ট আমরা খুচরায় ১৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, এবার তা ১৫৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’
মুয়াদের পণ্যের বিক্রির পরিমাণ গত বছরের মতোই রয়েছে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা। একই কথা জানান ডান ফ্যাশনের ম্যানেজার মাসুদ আলম।
তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি অনেক কম বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকের অন্যতম পাইকারি মার্কেট সদরঘাট হকার্স মার্কেট ও দক্ষিণ কেরাণিগঞ্জের বিভিন্ন মর্কেটের বিক্রেতারা।
হকার্স মার্কেটের সিফাত হোসিয়ারী এ্যান্ড গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠান শিশুদের সবধরনের পোশাক পাইকারি বিক্রি করেন। প্রতিষ্ঠানের সত্বাধীকারি মো. সুমন বলেন, যে হারে পাইকারি পণ্যের বিক্রি হচ্ছে তাতে মন্দাই বলা চলে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় জীবন যাত্রার ব্যয় প্রচুর বেড়েছে। এ অবস্থায় জরুরি পণ্য নিয়েই বেশি ভাবছেন ক্রেতারা। পোশাক বিলাসী পণ্য, তাই এর বিক্রি স্বাভাবিক ভাবেই কমে গেছে। তবে এখনও আমাদের হাতে ১৫-২০ দিন রয়েছে, আশা করছি বাজর ভাল হবে।’
পাইকারি শার্ট বিক্রয়কারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেরানিগঞ্জের হিমেল গার্মেন্টস এর সত্ত্বাধিকারী এমদাদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতাদের বড় কোন অর্ডার পাইনি। যা আসছে তা খুবই ছোট ছোট, পরিমাণে খুবই কম। অথচ গত বছর এই ক্রেতারাই বেশি পরিমাণে পণ্য কিনে নিয়ে গেছেন খুচরায় বিক্রির জন্য। খুচরা বিক্রেতারা বাজার পর্যবেক্ষণ করে অল্প করে পণ্য কিনছেন।’
শার্ট তৈরির কাঁচামাল কাপড়ের দাম গজ প্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে তাই শার্টের উৎপাদন খরচ ১০০-১৫০ টাক বেড়েছে বলে দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।’