প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিমের দাম

০৮ অক্টোবর ২০২১ ১৫:২৭:৫৮ | আপডেট: ৩ years আগে
নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিমের দাম

মেহেদী আল আমিন

ডিম, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের প্রোটিনের অন্যতম একটি উৎস। তবে এর ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ বাড়ায় মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে খুচরা বাজারে এক ডজন ডিমের দাম ১২০-১৩৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়বে।

করোনা মহামারির আগে, বাংলাদেশে আনুমানিক ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতো। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শতকরা হার বেড়েছে।

গাইবান্ধার গৃহবধূ ২৫ বছর বয়সী নাসিমা আক্তার বলেন, আমরা বছরে একবার মাংস খাই এবং কয়েকবার মাছ খাই।কিন্তু আমরা সপ্তাহে দুই বা তিন দিন ডিম খাই।

কম দাম এবং সহজলভ্যতার কারণে নাসিমার মতো অনেক পরিবারের একমাত্র প্রোটিন উৎস ডিম। তার পরিবারের সবাই খোলা লবন খায়, যাতে আয়োডিন থাকে না। সেই ক্ষেত্রে ডিম তার পরিবারের আয়োডিনের উৎস।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, একটি ডিমের মধ্যে রয়েছে ১২-১৩ গ্রাম প্রোটিন এবং ৪৯ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, দস্তা, বিটা ক্যারোটিন, আলফা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, বি-৬, বি-১২, ডিসহ ৯০টির বেশি পুষ্টি উপাদান।

উদ্বৃত্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বাড়ছে দাম:

এক দশকে ডিমের উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ১০ বছরে ডিমের চাহিদা বেড়েছে ২২৬.৭২ কোটি এবং সরবরাহ বেড়েছে এক হাজার ৪৪৯.৭৯ কোটি।

২০১০-১১ সালে দেশে এক হাজার ৫৩৯.২০ কোটি চাহিদার বিপরীতে ৬০৭.৮৫ কোটি ডিম উৎপাদন হয়েছে। ২০২০-২১ সালে এক হাজার ৭৫৬.৯২ কোটি চাহিদার বিপরীতে দুই হাজার ৫৭ কোটি ডিম উৎপাদন করা হয়েছিল। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বাংলাদেশে বর্তমানে ২৯১.৭২ কোটি উদ্বৃত্ত রয়েছে।

কৃষক ও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে।

প্রায় ৭০ শতাংশ খরচ হয় মুরগি খাওয়ানোর জন্য। অন্য ৩০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে একদিন বয়সী বাচ্চা ফোটানো, শ্রম, পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ, সম্পূরক এবং অতিরিক্ত খরচ।

গাজীপুরের ইউনাইটেড এগ্রো কমপ্লেক্সের মালিক খোন্দকার মহসিন বলেন, প্রতি কেজি লেয়ার পোল্ট্রি ফিডের দাম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ টাকা ছিল কিন্তু এখন এর দাম ৪৩-৪৪ টাকা।

তিনি জানান, বর্তমানে তার খামারে ৫৭ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। 

কৃষকদের ১৫.৫ পিস ডিমের জন্য গড়ে ২.১৫০ কেজি খাদ্য প্রয়োজন। অন্যান্য ৩০ শতাংশ খরচ যোগ করলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় ৭.১০ টাকা।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব মহসিন বলেন, যদি আমরা বর্তমান খাদ্য মূল্য বিবেচনা করি, তাহলে প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন খরচ আট টাকার বেশি হবে।

খাবারের দাম বেশি কেন? 

বাংলাদেশের পশু খাদ্যের বার্ষিক চাহিদা ৬৩ লাখ টনেরও বেশি। ফিডের ৬০ শতাংশ (৪৪ লাখ টন) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়, বাকিটা কৃষকরা উৎপাদন করে। আর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের মধ্যে ২৩ লাখ টন পোল্ট্রি ফিড।

ফিড উৎপাদনকারীরা জানান, কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান মূল্য খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। লেয়ার পোল্ট্রি ফিডে ৫৫-৬০ শতাংশ ভুট্টা, ২৫-৩০ শতাংশ সয়াবিন, ৯ শতাংশ চুনাপাথর এবং ৫-৯ শতাংশ ধানের তুষ থাকে।

চলতি বছরের শুরুতে গড়ে এক কেজি ভুট্টা ছিল ২১-২২ টাকা, এখন এর দাম ৩০-৩২ টাকা। কারণ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভুট্টা ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে ফিড শিল্পকে আমদানি করা ভুট্টা ব্যবহার করতে বাধ্য করেছে। 

২০২০-২১ সালে দেশে ৫৬.৬৩ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছৈ। যা আগের বছরের তুলনায় ২.৬১ লাখ টন বেশি। গত অর্থবছরে মাত্র ১.৩৫ লাখ টন সয়াবিন উৎপাদিত হয়েছিল।

এক কেজি সয়াবিনের দাম ছিল ৩২-৩৩ টাকা। কিন্তু এখন দাম বেড়েছে ৫১-৫২ টাকা। আর চালের তুষের গড় দাম ১৭ টাকা থেকে বেড়ে ৩০-৩১ টাকা হয়েছে।

কোয়ালিটি ফিড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো ইহতেশাম বি শাহজাহান দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ফিড উৎপাদন খরচ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। যদি খাদ্যের দাম ৩৪ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে প্রাণিসম্পদ খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে আমরা দাম বাড়িয়েছি কিন্তু সহনীয় পর্যায়ে রেখেছি।

ইহতেশাম বলেন, তেল মিল মালিকরা ভারতে সয়াবিন কেক রপ্তানি করে। তারা শূন্য আমদানি করের সুবিধা গ্রহণ করছে এবং প্রাণিসম্পদ খাতকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।