প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

নেমে যাচ্ছে জীবনযাত্রার মান

রোকন মাহমুদ
০৫ জুন ২০২২ ১৮:০৭:৪৯ | আপডেট: ৩ years আগে
নেমে যাচ্ছে জীবনযাত্রার মান

খাদ্যপণ্যের সঙ্গে দেশের বাজারে বাড়ছে নন-ফুড পণ্যের দাম। চাল ডাল, তেল চিনির দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিলো। সম্প্রতি দাম বেড়েছে গুড়া দুধ, মসলাসহ আরো বেশ কিছু পণ্যের। সেই সঙ্গে সাবান, শ্যাম্পুর মতো জরুরি প্রসাধনী সামগ্রী থেকে শুরু করে হেল্থ কেয়ার, পারসোনাল কেয়ার, কাগজ-কলমসহ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি।

বিক্রেতাদের হিসাব মতে খুচরা পর্যায়ে ২৫-৩০ শতাংশ বিক্রি কমেছে। বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম বোরোর ভরা মৌসুমেও গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ আগে ৬৮ টাকায় বিক্রি হওয়া চিকন চাল এখন ৭২ টাকা কেজি। ৫৬ টাকায় বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চাল ৬০ টাকা আর ৪৮ টাকা কেজি চালের দাম বেড়ে এখন ৫০ টাকা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে চিনির দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেড়ে ৮৪ টাকায় ওঠেছে।

মশুর ডাল ও এ্যাঙ্কর ডালসহ কিছু কিছু ডালের দাম কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা বেড়েছে। ভোজ্য তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশের বাজারে এখনও কমেনি। তরল ও গুড়া দুধের দাম বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে দফায় দফায় তরল দুধের দাম ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০-৮৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। মিল্কভিটা দুধের দাম ১০ টাকা বেড়ে লিটার প্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত এক মাসে গুড়াদুধের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা। আর দুই মাসে বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে দুই মাস আগে ব্র্যান্ড ভেদে এক কেজি গুড়া দুধের দাম ছিল ৬৫০-৬৬০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত।

মসলা পণ্যের দাম

আগামী কোরবানির ঈদের আগেই বাড়ছে গুড়া মসলার দাম বাড়ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম হলুধের গুড়ার দাম ছিল ৯০-৯৫ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২০-১২৫ টাকা হয়েছে। একই পরিমাণ মরিচের গুড়া যা আগে ছিল ১০০ টাকা এখন তা ১৩০ টাকায় ওঠেছে। ধনিয়ার গুড়া ছিল ৩০ টাকা, এখন ৩৫ টাকা।

বেড়েছে সাবান-শ্যাম্পুর দাম

কয়েক মাস আগেও একটি ১০০ গ্রাম বিউটি সোপ কেনা যেত ৩২-৪০ টাকায়। এখন কিনতে লাগছে ৪৫-৫২ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে লাক্স ১০০ গ্রাম সাবান কিনতে ক্রেতার খরচ হতো ৩৫-৩৬ টাকা এখন দাম বেড়ে তা ৫০ টাকায় হয়েছে। একইভাবে বেড়েছে লাইফবয়, সেন্ডালিনা, সেভলন, ডেটলসহ প্রায় সব বিউটি সোপের দাম। সেভলন ব্র্যান্ডের ১০০ গ্রাম বিউটি সোপের দাম ছিল ৪০ টাকা, ১২ টাকা বেড়ে এখন ৫২ টাকা হয়েছে। ডেটল সোপের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৪৭ টাকা ও লাইফবয় ৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সচেতন হলেও বাড়বে খরচ বাজারে

১ কেজি হুইল ব্র্যান্ডের গুড়া সাবান কিনতে ক্রেতার খরচ হতো ৯০ টাকা, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সার্ফএক্সেলের ৫০০ গ্রামের দাম ছিল ৯২ টাকা এখন ১১০ টাকা, একই পরিমাপের রিন ব্র্যান্ডের গুড়াসাবান ছিল ৬০ টাকা, ৮ টাকা বেড়ে এখন সেটি ৭২ টাকা হয়েছে।

পারসোনাল কেয়ার

পারসোনাল কেয়ার পণ্যের দামও কিছুটা বেড়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক প্যাকেট (৫টি) ব্লেড আগে ১৫ টাকায় বিক্রি করলেও লাভ হতো। এখন ২০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। ভাল ব্র্যান্ডের যে রেজার ৪০০ টাকায় কেনা যেত মাস খানেক আগেও এখন তা ৪২৫ টাকা রাখছেন বিক্রেতারা।

খাতা-কলম স্টেশনারির দাম উর্ধ্বমুখী

খাতা-কলম প্রিন্টারের কাগজসহ প্রায় সবধরনের স্টেশনারি পণ্যের দামও উর্ধ্বমুখী। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে ৩০০ পৃষ্ঠার যে খাতা মাস খানেক আগেও ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এক ডজন কলম আগে ৪৮ টাকায় বিক্রি করলেও ভাল লাভ হতো। এখন ৫৫ টাকায় বিক্রি করেও আগের তুলনায় লাভ হচ্ছে খুবই কম।

বিক্রেতারা যা বলছেন

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মেসার্স আল্লাহর দান স্টোরের বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রজমান বলেন, প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। যেগুলো বাড়েনি সরবরাহকারীরা সেগুলোর দাম বৃদ্ধিও আভাসও দিয়ে রেখেছেন। দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের বিক্রি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আমার অনেক ক্রেতা আগে এক কেজির কমে কোন খাদ্য পণ্য কিনতো না। এখন ২৫০ গ্রাম কিংবা ৫০০ গ্রাম করে কিনছেন তাদের অনেকে।

ক্রেতার নাভিশ্বাস

সেগুনবাগিচা বাজারে পণ্য কিনতে আসা আসমা আলম বলেন, প্রতিদিন বাজারে আসলেই বিক্রেতা কোন না কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধির সংবাদ দেন। বাজারে আসার সময় যে টাকা নিয়ে আসি তা দিয়ে বাজার শেষ করতে পারি না। সংসারের খরচ দিন দিন বাড়ছেই। জীবন যাত্রার ব্যয় সমন্বয় করা এখন প্রচন্ড কষ্টকর। একই রকম কথা বলেন, মালিবাগ বাজারে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, আয় না বাড়লেও ব্যয় বাড়ছে। ফলে ভোগ কমছে সেই সঙ্গে জীবন যাত্রার মান নিচে নেমে যাচ্ছে। কম খেতে থাকলে মানুষ এক সময় পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে।

আরও পড়ুন- ‘বিশ্ববাজারে নিরাপদ আম পৌঁছে দিতে কাজ চলছে’