প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

পণ্যের দাম বাড়লেও প্রফিট মার্জিন কমেছে, দাবি ইউনিলিভারের

রোকন উদ্দীন
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:১৩:৪৩ | আপডেট: ১ year আগে
পণ্যের দাম বাড়লেও প্রফিট মার্জিন কমেছে, দাবি ইউনিলিভারের

সাবান-শ্যম্পুর দাম তিন মাসে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েও এটাকে স্বাভাবিক বলে দাবি করছে এ খাতের বহুজাতিক উৎপাদক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ।

একই সঙ্গে দাম বাড়িয়েও প্রফিট মার্জিন কমে গেছে বলে দাবি তাদের। বিউটি সোপ, কাপড়কাচার সাবান, শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্বাভাকি ভাবে বাড়িয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা আইনের পরিপন্থী কাজ করেছে- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিযোগীতা কমিশনের এক শুনানিতে অংশ নিয়ে এসব দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবীরা। তবে এদিন তারা এই স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ দেয়নি। কমিশন তথ্য প্রমাণসহ আগামী শুনানিতে আসতে বলেছে তাদের।

রাজধানীর ইস্কাটনে কমিশন কার্যালয়ে মঙ্গলবার ইউনিলিভার ছাড়াও বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল, সিটি গ্রুপ, রশিদ এ্যাগ্রো, বেলকন গ্রুপ, প্যারাগণ পোল্ট্রি ও ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জুলাইয়ে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার পর হঠাৎ করে চাল, আটা-ময়দা, ডিম-মুরগি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে বাজার অস্থির করা, কোনো ভ্যালু এডিশন না করে শুধুমাত্র পণ্যের প্যাকিং করে দাম বাড়ানো, অযৌক্তিক মুনাফা করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এসময় কমিশন ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ী হয়ে চালের বাজারে কেন আসছে, পণ্যের দাম হঠাৎ করে বাড়ার কারণ কী, উৎপাদন কমেছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন করেন।

শুনানিতে ইউনিলিভারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যরিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খানের নেতৃত্বে কয়েকজন আইনজীবী। এসময় তাদের অভিযোগ বলা হয়, বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যম ও বাজার পর্যালোচনা করে জানা যায় যে প্রতিষ্ঠানটি তিন মাসে বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে বাজার বাজারের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিযোগিতার পরিবেশ ব্যহত করেছে। এসময় প্রতিটি মিনি সাবারের দাম ৫ টাকা, লাক্স সাবানের দাম ২০-২৫ টাকা, হুইল গুড়াসাবানের দাম ৫০-৫৫ টাকা সার্ফএক্সেল গুড়াসাবানের দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে নির্ধারণ করে বাজারে প্রতিযোগীতার পরিপন্থী কাজ করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে প্রতিয়মান হয়।

এর জবাবে ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে বলা হয়, পণ্যের দাম বেড়েছে এটা ঠিক কিন্তু এই দাম অযৌক্তিক ভাবে বাড়েনি। প্রয়োজনীয় ইনপুটের দাম বৃদ্ধি, ডলারে দাম বৃদ্ধি ও জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওযায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের বাড়তি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দাম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সময় সময় জানানো হয়েছে। কারণ পণ্যের সঙ্গে ভ্যালু এ্যাডেড ট্যাক্স (ভিএটি) যোগ করতে হয়েছে। এসময় তারা দাবি করেন পণ্যের দাম বাড়ানোর পরও আগের তুলনায় প্রফিট মার্জিন (মুনাফার হার) কমেছে।

এসময় তারা উৎপাদন খরচ, মোট বাজারে তাদের মার্কেট শেয়ার, বিক্রির পরিমান, উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্য, প্রফিট মার্জিন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য কমিশনকে সরবরাহ করতে আরো ৮ সপ্তাহ সময় চায়। তবে কমিশন আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেন তাদের।

মঙ্গলবার কমিশনে চাল বিপণন কোম্পানি রশিদ এগ্রো, নওগাঁর বেলকন গ্রুপ (রজনীগন্ধা ব্র্যান্ড), সিটি গ্রুপ (তীর ব্র্যান্ড) ও বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের (রূপচাঁদা ও ভেওলা) কাছ থেকে অভিযোগের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সব কোম্পানিই তাদের কাছে চাওয়া প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ না করে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় বৃদ্ধির আবেদন করে।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও চালের বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে চাল, আটা-ময়দা, ডিম-মুরগি, সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডার বাজারজাতকারী ও পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একযোগে স্বপ্রণোদিত মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন। এসব মামলার ওপর সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক শুনানি।

মঙ্গলবার শুনানিতে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, বিআর ২৮, বিআর ২৯ ও কাটারি ধানকে পলিশ করে চকচকে করে তারা মিনিকেট ব্র্যান্ড নামে বাজারজাত করেন। ক্রেতারা মিনেকেট চাল বেশি পছন্দ করার কারণেই তারা মিনেকেট নামে বিক্রি করে। রূপচাঁদা ও ভিওলা ব্র্যান্ড নাম দিয়ে তারা মিনেকেট চাল বিক্রি করে। সাধারণ ক্রেতাদের কথা বিবেচনায় রেখে ভিওলা এবং উচ্চশ্রেণির ক্রেতাদের জন্য রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত চাল বাজারজাত করা হয়। এক্ষেত্রে দামেও কিছুটা পার্থক্য থাকে।

কমিশনের একজন সদস্য বলেন, আপনারা কোন জাতকে কোন নামে কোন ব্র্যান্ডে বিক্রি করছেন তা তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। দেখা যাবে একই ভ্যারাইটির ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ড নাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানায় নিজস্ব কোনো মিল না থাকলেও বিভিন্ন মিলের সঙ্গে চুক্তি করে ওই মিল মিলে উৎপাদিত চাল নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করে এডিবল অয়েল কোম্পানি। তেলের কোম্পানি হওয়া স্বত্ত্বেও নিজেদের চাল বিক্রির লাইসেন্স থাকার কথাও তারা কমিশনকে জানায়। আগামী ১৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে এর মধ্যে তথ্য দিতে বলে কমিশন।

শুনানিতে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম ছাড়াও সদস্য জি.এম. সালেহ উদ্দিন, এ.এফ.এম মনজুর কাদির ও নাসরিন বেগম উপস্থিত ছিলেন।

এদিন চাল এবং আটা ময়দার বাজারে কারসাজির জন্য সিটি গ্রুপ শুনানিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের জবাব ও তথ্য দিতে সময় আবেদন করে। কমিশন তাদের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেয়। ওই দিন তাদের আটা-ময়দার সেম্পলসহ হাজির হতে বলে। একইভাবে রশিদ এ্যাগ্রোকেও ওই দিন আসতে বলে কমিশন।

শুনানিতে প্রয়োজনীয় তথ্য উত্থাপন করতে না পারায় রশিদ এগ্রোকেও আগামী ১৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানিতে আসতে বলা হয়। শুনানিতে রশিদ এগ্রো ফুডের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার শেখ সহিদুজ্জামান বলেন, মূল্যবৃদ্ধি ও বাজারে সঙ্কট সৃষ্টির যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা সত্য। তবে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, লোডশেডিংয়ের কারণে বার বার ডিজেল চালিত জেনারেটরের সাহায্য নেওয়া ও ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের মিলে চালের দাম বেড়েছে। চালের বাজারে নিজেদের ৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে স্বীকার করে অন্যান্য কোম্পানি যেমন জহুরা, এরফান ও মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মার্কেট শেয়ার রশিদের চেয়ে বেশি বলে দাবি করেন সহিদুজ্জামান।

এসময় মুরগি ও ডিমের মূল্যকারসাজির অভিযোগে প্যারাগণ এ্যাগ্রোর কাছে জানতে চান দাম হঠাৎ বাড়লো কেন। তারা জবাবে তারা বলেছে দাম তারা নিজেরা নির্ধারণ করেনা, বিডারদের কাছ থেকে যে দাম পায় সেই মূল্যেই বিক্রি করে।

কমিশন এক প্রশ্নে উত্তরে তাদের সাধারণ ডিম, ব্রাউন ডিম ও ওমেগা ডিম এই তিন ধরণের ডিম বাজারে রয়েছে বলে জানায়। এসময় কমিশন জানতে চান, তাদের ডিমে বাড়তি ওমেগা আছে এর কোন ল্যাব টেস্ট আছে কিনা। তারা জানায়, তাদের ওমেগা ডিম সাইন্স ল্যাব কর্তৃক সার্টিফাইড। কমিশন জানতে চান, সার্টিফিকেট নেয়ার পর ডিমের মান ঠিক হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে কোন তদারকি হয়েছে কিংবা হচ্ছে কিনা? এর উত্তরে তারা বলে, এগুলো তারা নিজেরাই তত্বাবধান করে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পণ্যের মান তদারকি করে না। শুধু ফার্ম তদারকি করে।