নিয়াজ মাহমুদ, তালুকদার ফরহাদ
৬৪টি কোম্পানিকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে তাদের পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সিদ্ধান্ত দুর্বল মৌলভিত্তির জাঙ্ক কোম্পানিগুলোর জন্য আশীর্বাদ হলেও ভালো কোম্পানিগুলোর জন্য ক্ষতিকর বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কোম্পানিগুলোকে নতুন নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিস্তারিত প্রস্তাব নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার লো-ক্যাপ সংস্থাগুলোকে নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে চিঠি দিয়েছে সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
দ্য বিজনেস পোস্ট’র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৩৪৫টি কোম্পানির মধ্যে ৬৪টির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম।
স্টক এক্সচেঞ্জের মূল পর্ষদে তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম (তালিকাকরণ) প্রবিধান, ২০১৫ অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন হিসেবে অন্তত ৩০ কোটি টাকা থাকতে হবে।
পরিশোধিত মূলধন হলো- স্টকের শেয়ারের বিনিময়ে শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে কোনো কোম্পানির প্রাপ্ত অর্থ।
এ পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ম্যানিপুলেটররা সাধারণত ছোট-ক্যাপ স্টকগুলোকে লক্ষ্য করে, যা সহজেই হেরফের করা যায় এবং তাদের শেয়ারের চাহিদা কৃত্রিমভাবে স্ফীত করার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়াও তিনি বলেন, এ নির্দেশনা পুঁজিবাজারে গভীরতা আনতে সাহায্য করবে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, অন্যদিকে, কিছু কোম্পানির মূলধন কম কিন্তু তাদের রিজার্ভ অনেক বেশি। কিন্তু তারা মূলধন বাড়াচ্ছে না। আমরা তাদের মূলধন বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
স্টক মার্কেট বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, এ পদক্ষেপটি দুর্বল মৌলভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভালো, তবে শক্তিশালী মৌলভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নেতিবাচক।
তিনি আরও বলেন, দুর্বল কোম্পানি বা খারাপ পারফরম্যান্সকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ পদক্ষেপ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো একবার এটি করতে ব্যর্থ হলে, তাদের এসএমই বোর্ডে পাঠানো যেতে পারে।
এ পদক্ষেপ বহু-জাতিক কোম্পানিগুলোর কাছেও ভুল বার্তা পাঠাবে। কারণ, তারা সব সময় পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে অনিচ্ছুক।
৩০ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ সংখ্যক কোম্পানি খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট খাতের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এসব কোম্পানির সংখ্যা ১২টি। অন্যগুলো হলো- প্রকৌশল, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল, জ্বালানি, কাগজ ও ট্যানারি খাতের।
৫ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলো হলো ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, সাভার রিফ্র্যাক্টরিস, লিব্রা ইনফিউশনস, জুট স্পিনার্স, রেনউইক জাজনেশ্বর অ্যান্ড কো (বিডি), নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, আম্বি ফার্মাসিউটিক্যালস, মন্নো এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারি, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্মা এইডস, বিডি অটোকারস, জেমিনি সি ফুড, রেকিট বেনকিজার, কেএওয়াই অ্যান্ড কিউ এবং শ্যামপুর সুগার।
যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ টাকার বেশি কিন্তু ১০ কোটি টাকার নিচে সেগুলো হলো- শ্যামপুর সুগার, আজিজ পাইপস, অ্যাপেক্স ফুডস, জিল বাংলা, আরামিত লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ন্যাশনাল টি, দেশ গার্মেন্টস, বঙ্গস, দুলামিয়া কটন, ইমাম বোতাম, প্রাণ, এপেক্স স্পিনিং, জিকিউ বলপেন, বিডি ল্যাম্পস, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, রহিম টেক্সটাইল এবং রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড।
১০ টাকার ওপরে কিন্তু ১৫ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলো হলো- সমতা লেদার, পেপার প্রসেসিং, ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, মেঘনা পেট, ইউনিলিভার কনজিউমার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, বাটা স্যু, স্টাইলক্রাফ্ট, ফাইন ফুডস এবং ওয়াটা কেমিক্যাল।
পরিশোধিত মূলধন ১৫ টাকার বেশি কিন্তু ২০ কোটি টাকার নিচে এমন কোম্পানিগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, লিন্ডে বিডি, এপেক্স ট্যানারি, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, উসমানিয়া গ্লাস, আনলিমা ইয়ার্ন, সোনালী পেপার, সমরিতা হাসপাতাল, হাক্কানি পাল্প, রহিমা ফুড এবং সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ।
২০ টাকার বেশি, কিন্তু ৩০ কোটি টাকার নিচে পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিগুলো হলো- ওরিয়ন ইনফিউশন, জেএমআই সিরিঞ্জ, কোহিনূর কেমিক্যাল, আল-হাজ টেক্স, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, এইচআর টেক্সটাইল, ইস্টার্ন ক্যাবলস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল এবং মেঘনা সিমেন্ট।
সিকিউরিটিজ বিধি অনুসারে, কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি রাইট শেয়ার, স্টক লভ্যাংশ এবং পুনরাবৃত্ত পাবলিক অফারের মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারে।