প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

পর্যবেক্ষক প্রত্যাহারে আর্থিক অনিয়ম বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকে?

মেহেদী হাসান
০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:০০:১৯ | আপডেট: ১ year আগে
পর্যবেক্ষক প্রত্যাহারে আর্থিক অনিয়ম বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকে?

২০১০ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে (আইবিবিএল) পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেসময় সন্দেহজনক কার্যকলাপ ও ঋণ অনিয়মের আশঙ্কা দেখা দেয়ায় আর্থিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছিল ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। কিন্তু ১০ বছর পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ ইসলামী ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

হঠাৎ ব্যাংকটি থেকে পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে নেয়া ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা ভালো বলেই ইঙ্গিত দিয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবতা ছিল পুরো বিপরীত।

সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১১ ভুতুড়ে এবং নামহীন কোম্পানিকে ৯ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। পর্যবেক্ষক প্রত্যাহারের পরও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যার অধিকাংশ অনুমোদন হয়েছে। এরপরই বিতর্কের মুখে পড়ে ব্যাংকটি।

অনেক বিশেষজ্ঞ ও শিল্পসংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, ঋণ অনিয়মে জড়িত হওয়ার আগেই কেন ইসলামি ব্যাংক থেকে পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক?

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মালিক একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ। এজন্যই ব্যাংকটি থেকে পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জামায়াতে ইসলাম যখন ব্যাংকটি পরিচালনা করত তখন ব্যাংকটির অবস্থা খুবই ভালো ছিল। কিন্তু ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম।

তিনি আরও বলেন, পর্যবেক্ষক প্রত্যাহার করে পরোক্ষভাবে ঋণ অনিয়মের সাথে জড়িতদের সাহায্য করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটিতে একজন পর্যবেক্ষক থাকলে অপরাধীরা এত বড় অঙ্কের ঋণ নিতে পারতো না।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের যত দ্রুত সম্ভব আইবিবিএলের দায়িত্ব নেয়া উচিত। অন্যথায় ব্যাংকটির অবস্থা আরও খারাপ হবে। আমানতকারীদেরও এই ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নেওয়া উচিত।”

এ বিষয়ে বিজনেস পোস্টের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেইন প্রশ্ন তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও আইবিবিএল কীভাবে এত বড় ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়লো?

প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংকটির মালিক হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “যে কোনো ব্যাংকে এ ধরনের ঋণ অনিয়ম হলে আমানতকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই বিপজ্জনক।”

আইবিবিএলের অনিয়মের যত অভিযোগ

চলতি বছরের ৫ জুন ইসলামী ব্যাংকের ১৯৭০ তম নির্বাহী কমিটির সভায় নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডকে ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে বিতরণের জন্য ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে।

সেই সময়কালে কোম্পানির সিআইবি’র (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) তথ্য অনুসারে, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৮.৫ লাখ টাকার এক্সপোজার ছিল কোম্পানিটির।

পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অভ্যন্তরীণ ক্রেডিট রিস্ক রেটিং সিস্টেম (আইসিআরআরএস) অনুযায়ী কোম্পানিটি প্রান্তিক শ্রেণীর (নতুন কোম্পানি) অন্তর্গত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানিটির কাছ থেকে আমানত হিসেবে ১১০ কোটি টাকাসহ জামানত হিসেবে আইবিবিএলের অন্তত ২৩০ কোটি টাকা নেওয়া উচিত ছিল। সহজ ঋণের শর্তে এই ধরনের সিকিউরিটি বাধ্যতামূলক নয়, তাই ঋণগুলি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

নাবিল ফিড মিলস লিমিটেডকে ৭০০ কোটি টাকাসহ নাবিল গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে ইসলামি ব্যাংক রাজশাহী শাখা।

সভার কার্যবিবরণীতে ব্যাংকটি দাবি করেছে, নাবিল ফিড মিলস লিমিটেড এবং নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেড একই গ্রুপের কোম্পানি নয়। তবে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানই নাবিল গ্রুপের বলে সন্দেহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যদি নাবিল গ্রুপের হয় তাহলে একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা অতিক্রম করেছে ইসলামি ব্যাংক। যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন।

তবে সাম্প্রতিক সরকারি নির্দেশের পর ওইসব কোম্পানিকে দেয়া ৯ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার ঋণ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।