প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

প্রতারিত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে চায় ৪ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

মিরাজ শামস
২২ মে ২০২৩ ১৬:১২:২৫ | আপডেট: ২ years আগে
প্রতারিত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে চায় ৪ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

পণ্য কেনার আদেশ দিয়ে প্রতারিত হওয়া গ্রাহকদের পাওনা অর্থ ফেরত দিতে চায় ৪ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করার পর এই অর্থ দিতে সম্মতি জানিয়েছে তারা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে - আলাদিনের প্রদীপ, আলেশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ ও ধামাকা শপিং।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভার্চুয়াল প্লার্টফমে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ টাকা ফেরত দেয়া কথা জানান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ফেরত দিতে গ্রহকদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার ও পাওনা অর্থের পরিমাণসহ পুরো তালিকা এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নিয়ে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম শিকদার বলেছেন, শুরুতে আলেশা মার্টের দেনার পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি টাকা। এই পাওনা অর্থের মধ্যে ৬৮০ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তার মতে, বর্তমানে ৮০০০ গ্রাহকের ১১৬ কোটি টাকা আটকা আছে। এর মধ্যে ১৫৪ জন গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে দেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা দিয়েছেন তারা।

বৈঠকে আলাদিনের প্রদীপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেদি হাসান মুন জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠিয়েছেন তারা। ওই তালিকা অনুযায়ী পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা থাকা গ্রাহকদের অর্থ হস্তান্তর করার কথা বলেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা ১৮১১ জন গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া আরও ৮০০ গ্রাহকের তালিকা তৈরি করছে আলাদিনের প্রদীপ। এই তালিকা করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সিরাজগঞ্জ শপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুয়েল রানা বৈঠকে বলেন, সিরাজগঞ্জ শপের ২৮০০ গ্রাহকের ২৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ শপ নগদ পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে ৮ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। কিন্তু নগদ কতৃপক্ষ এ অর্থ সিরাজগঞ্জ শপকে না জানিয়ে প্রত্যাহার করে হিসাবটি স্থগিত করে রেখেছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার নগদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোন সমাধান হয়নি। এ টাকা হস্তান্তর করা হলে সিরাজগঞ্জ শপের গ্রাহকদের সিংহভাগ অর্থ ফেরত দেয়া সম্ভব হবে বলে দাবি করেন জুয়েল রানা। তিনি বলেন, এসএসএল কমার্স পেমেন্ট গেটওয়েতে ৩ লাখ ১০ হাজার ৫১৮ টাকা আটকা আছে এ টাকাও গ্রহকদের ফেরত দেয়া হবে।

ধামাকা শপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন চিসতি জনিয়েছেন, গ্রহকদের সব পাওনা পরিশোধ করতে চান। এ জন্য নির্বিঘ্নে দেশে আসার সুযোগ চান তিনি। জসীম উদ্দিন চিসতি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক মানি লন্ডারিং এর অসত্য মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি গোয়েন্দা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী সব তথ্য দাখিল করেছেন। ধামাকা শপিংয়ের কোন টাকা অবৈধভাবে দেশের ভিতরে ও দেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। ইকমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া গ্রাহকেরা পাওনা টাকা ফেরত পাচ্ছেন। তবে জটিলতার কারণে ফেরত পেতে দেরি হচ্ছে।

মোট ২৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের পাওনা ৫২৫ কোটি টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা ছিল। পেমেন্ট গেটওয়েতে আটাকা থাকা এই টাকার এখন পর্যন্ত ১৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ৩৬৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। এখনো ১৬০ কোটি টাকা ফেরত পাননি গ্রাহকেরা। এর বাইরেও ২০২১ সালের ৩০ জুনের আগের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য কম। এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে ওই সময়ের আগের অনেক টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযোগ দিয়ে আসছেন গ্রাহকরা।

এই টাকা ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর থেকে ২৭টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্য ক্রয়াদেশের বিপরীতে গ্রাহকদের টাকা আটকে ছিল। টাকাগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পক্ষে লেনদেন পরিশোধকারী কোম্পানিতে (পেমেন্ট গেটওয়ে) আটকে আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বলে আসছে, ২০২১ সালের ৩০ জুনের পরে দেয়া টাকা গ্রাহকেরা ফেরত পাবেন।

২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হচ্ছে, এদিন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক ‘এসক্রো’ ব্যবস্থা চালু করে। এ ব্যবস্থা হচ্ছে গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ নিশ্চিত করা। কিন্তু তা মেনে চলেনি অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো।

গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি দেখভাল করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা জমা রয়েছে মোট পাঁচটি পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানে। এগুলো হচ্ছে বিকাশ, নগদ, সফটওয়্যার শপ লিমিটেড (এসএসএল), সূর্যমুখী লিমিটেড ও ফস্টার করপোরেশন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২৭টির মধ্যে ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ২৫ হাজারের বেশি গ্রাহকের কোনো টাকাই ফেরত দেয়নি। আর ১৩টি ফেরত দিয়েছে আংশিক। ফেরত না দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদীনের প্রদীপ, নিডস, টোয়েন্টিফোর টিকেটি, ই-অরেঞ্জ, উইকুম, আকাশ নীল, প্রিয়শপ, আমার বাজার, আস্থার প্রতীক, বাড়ির দোকান ডটকম, নিরাপদ ও ইনফিনিটি মার্কেটিং ইত্যাদি।

পাঁচ গেটওয়েতেই আটকে থাকা টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৯ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে কিউকম। নতুন করে ইভ্যালিতে আটকে আছে গ্রাহকদের প্রায় ২৬ কোটি টাকা। ইভ্যালি এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের ৮৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। এছাড়া পেমেন্ট গেটওয়েতে আলেশা মার্টের কাছে ৪২.৭৩ কোটি টাকা গ্রাহকদের পাওনার মধ্যে ৪০.৬৭ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে।