বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রধান তিনটি সূচকে ভালো করছে। সর্বশেষ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের তথ্য বলছে, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের পোশাক পণ্য রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এ বছরের প্রথম পাঁচমাসে ইউরোপে ৪৫ ভাগ গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ৬০ দশমিক ৩০ শতাংশ।
কেবল ইউরোপ-আমেরিকা নয় মোটের ওপর বিগত অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায় চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।
কেবল রপ্তানি, রেমিট্যান্স এবং বেসরকারিখাতে প্রবৃদ্ধির হারও সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রগতি দেখাচ্ছে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম মাসেই ৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর(ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষাংশে দেশ ৫২ বিলিয়য়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি করে মাইলফলক অর্জন করে। এর আগে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির রেকর্ড ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, তৈরি পোশাক প্রবৃদ্ধিতে যথারীতি সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। গতমাসে এই খাত থেকে তিন দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করা হয়েছে। সেই হিসাবে মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৪৯ শতাংশই পোশাক পণ্য। গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছর রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্টেট -এর তথ্যমতে এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য আমদানি বাড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয় এই সময়ের মধ্যে নয় দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইতে বেসরকারি প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৫২ থেকে ১৩ দশমিক ৯৬ লাখ কোটিতে পৌঁছেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তা বলছে, অনেকে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। অনেকে উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছেন। স্বল্প সুদে আবাসন, কার, ও ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণের হার এ বছর বেড়েছে। এছাড়া গত চারমাসে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ।
যদিও ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩.৬ শতাংশ।ফলে ইতোমধ্যে মুদ্রানীতির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। অনেক মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও ভোক্তারা বেশি ঋণ নিচ্ছেন। কারণ ঋণের বিপরীতে সুদহার এখন পর্যন্ত ৯ শতাংশই রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আগস্টে দুই দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করেছে। যা অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রা সংকট কাটিয়ে উঠতে আশার আলো দেখাচ্ছে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসী কর্মীরা দুই দশমিক ০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে যা বিগত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে এক দশমিক ৮৭ ও এক দশমিক ৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আরও রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজ করেছে।
সরকার রেমিট্যান্স প্রণোদনার পাশাপাশি নীতিগত সহায়তা প্রদান করছে। এখন ডলারের দাম বেশি বলেও জানান তিনি।
এই খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত অর্থবছরে মহামারি পরবর্তী বৈদেশিক শ্রমবাজারে বেশি পরিমাণে জনশক্তির রপ্তানি রেমিটেন্স প্রবাহকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।
জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২২ অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৮ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছেন। যা ২০২১ সালে ছিল মাত্র ২ লাখ ৭১ হাজার মাত্র। এটি গত সাত বছরের ইতিহাসে বৈদেশিক শ্রমবাজারে সর্বোচ্চ।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, মালয়েশিয়া আলোচনা সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করলে শ্রমিকদের বর্হিগমন প্রবাহ এই অর্থবছরে আরও বাড়বে।