প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

প্রসিদ্ধ হচ্ছে রেডি-মিক্স মশলার বাজার

১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:২৫:০৭ | আপডেট: ৩ years আগে
প্রসিদ্ধ হচ্ছে রেডি-মিক্স মশলার বাজার

আব্দুর রাজ্জাক সোহেল

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ব্যস্ততা। সেই ব্যস্ততা কাটিয়ে বাড়িতে তৈরি মসলা ব্যবহার করে রান্না করার সময়-সুযোগ খুব কম মানুষ পেয়ে থাকেন। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছে ভরসার জায়গা করে নিয়েছে রেডি-মিক্স মশলা।

বর্তমানে প্রায় ১০টি স্থানীয় কোম্পানি ৩০টির মতো খাবারের জন্য বিভিন্ন রেডি-মিক্স মশলা বাজারজাত করছে। তাদের দাবি, সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তাদের কাছে ‘সন্তোষজনক স্বাদ’ পৌঁছে দিচ্ছেন তারা। বর্তমানে রেডি-মিক্স মশলার মধ্যে মুরগি, গরুর মাংস, মাছ, বিরিয়ানি, তেহারি, হালিম, নুডুলস, কাবাব ও রোস্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

রেডি-মিক্স মশলা উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই ফুডস লিমিটেড, লালমাই ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও বিডি ফুড।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জানান, ১০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, “আমাদের মাংস, বিরিয়ানি এবং হালিম মশলা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।”

রেডি-মিক্স মশলার বাজার নিয়ে কোনো বিশদ তথ্য দেননি কামরুজ্জামান কামাল। তবে দ্য বিজনেস পোস্ট'কে তিনি বলেন, আমরা অনুমান করছি, রেডি-মিক্স মশলার বর্তমান বাজার প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। প্রতি বছর এটি ১০-১২ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান মাথাপিছু আয়, নগরায়ণ এবং পরিবর্তিত জীবনধারা প্রবৃদ্ধির পেছনের মূল কারণ।

তার ভাষ্য, “শহরের লোকজন তাদের চাকরি নিয়েই বেশ ব্যস্ত থাকেন এবং তাদের অবসর সময় কম। এজন্য তারা রেডি-মিক্স মশলা বেছে নিচ্ছে।”

এসিআই ফুডস লিমিটেডের সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার ফজলে রাব্বি বলেন, ৩০টি পণ্য নিয়ে তাদের ১২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে।

তিনি বলেন, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য তারা তাদের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করেন।

অনেক ভোক্তা বলছেন যে, তারা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এজন্য বাড়িতে মশলা তৈরি করাকে ঝামেলা মনে করেন তারা।

এদিকে কিছু লোক বলেছেন, তারা স্বাদের জন্য রেডি-মিক্স মশলা ব্যবহার করেন এবং বাড়িতেই বিভিন্ন রেসিপি তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রান্নার সময় বের করতে পারেননি জানিয়ে রাজধানী ঢাকার চকবাজারের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, রেডি-মিক্স মশলার ব্যবহার আমার জন্য বেশ সময় সাশ্রয় করেছে এবং আমাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

তিনি জানান, রান্নার স্বাদ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে পণ্যের গুণমান নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি।

সম্প্রতি রেডি-মিক্স মশলার জনপ্রিয়তা আরও স্থানীয় কোম্পানিকে বাজারে আসতে উৎসাহিত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা ও মেঘনা গ্রুপও রেডি-মিক্স মশলার বাজারে এনেছে।

রেডি-মিক্স মশলার বাজারে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্র্যান্ড স্কয়ার গ্রুপের “রাঁধুনী”।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সৈয়দ জুনায়েদুল হক মনে করেন, খোলা মশলার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কারণে মানুষ প্যাকেজজাত মশলার দিকে ঝুঁকছে।

দ্য বিজনেস পোস্ট'কে তিনি বলেন, রেডি-মিক্স মশলার বাজারে সেরা হওয়ার সুবাদে এই বাজারের সিংহভাগ শেয়ারই পাচ্ছে রাঁধুনী। বর্তমানে বাজারে রাঁধুনীর ৩০টি রেডি-মিক্স মসলা রয়েছে এবং এই বাজারের স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধিকে উপভোগ করছে।

সস্তা ও সুবিধাজনক হওয়ায় মানুষ রেডি-মিক্স মশলার দিকে ঝুঁকছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেডি-মিক্স মশলা আপনাকে কম খরচে একটি ভালো স্বাদ দিতে পারে এবং এটি একটি সুস্বাদু রান্নায় কতটা মশলা দিতে হবে তা জানার প্রয়োজনীয়তা দূর করেছে। কারণ এই পরিমাপ প্যাকেটের গায়েই দেওয়া রয়েছে।

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঘরে তৈরি মশলার মিশ্রণ

এদিকে স্বাস্থ্য-সচেতন ভোক্তাদের মধ্যে একটি বিশেষ বাজার তৈরি করে নিয়েছে বাড়িতে তৈরি মশলার মিশ্রণ। যা মানুষকে, বিশেষ করে মহিলাদের ছোট অনলাইন ব্যবসায় আসতে উৎসাহিত করেছে।

ফরিদপুরের এমনই একজন উদ্যোক্তা পারভিন আক্তার জানান, তিনি সম্প্রতি বাজারে এসেছেন।

তিনি বলেন, আমার মানসম্পন্ন পণ্য স্বাস্থ্যসচেতন মানুষকে আকৃষ্ট করছে। আমি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করি।

কুমিল্লার উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রুবেল বলেন, ‘বাড়ির স্বাদ’ এবং গুণগত মান ভোক্তাদের মধ্যে এ মশলার চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করি।

চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং উচ্চ আমদানি করকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এই শিল্পের অংশীদাররা।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কামাল বলেন, বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের দাম বাড়াতে হয়েছিল।

এদিকে এসিআই গ্রুপের রাব্বি বলেন, তারা তাদের পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রেখেছেন।

রাব্বি বলেন, এই ব্যবসার সাথে জড়িত অনেকে পণ্যের মান বজায় রাখে না এবং জনস্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে। তাই নীতি প্রবিধান আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লালবাগের একজন ব্যাংকার রুবাইয়া আক্তার বলেন, স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে খাবারে মিশ্র মশলা ব্যবহার করেন তিনি।

তিনি বলেন, ঘরে তৈরি মশলার স্বাদ অবশ্যই ভালো। তবে আমি মনে করি, রেডি-মিক্স মশলা স্বাদ বাড়ায়।

তিনি আরও বলেন, আমাকে বিরিয়ানি খেতে রেস্তোরাঁয় যেতে হতো। কিন্তু এখন আমি বাড়িতেই এটা তৈরি করতে পারি। এছাড়া রেডি-মিক্স মশলার কারণে অন্যান্য অনেক খাবার বাড়িতে সহজেই তৈরি করতে পারি।