প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ফলের উৎপাদন বেড়েছে ১৭.২১ শতাংশ

মেহেদী আল আমিন
১১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:০০:১৭ | আপডেট: ২ years আগে
ফলের উৎপাদন বেড়েছে ১৭.২১ শতাংশ

২০২২ অর্থবছরে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ১৭.২১ শতাংশ। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কলা। যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বার্ষিক উল্লম্ফন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে ফলের উৎপাদন রেকর্ড ছুঁয়েছে। সারাদেশে ৭.৩৪ লাখ হেক্টর জমিতে ১.৪৩ কোটি টন ফলন হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছরে প্রায় ৭.২৯ লাখ হেক্টর জমিতে ১.২২ কোটি টন চাষ হয়েছিলো।

চলতি অর্থবছরে প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৯.৫৩ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। যা গত বছরে ছিলো ১৬.৭৪ টন।

তালিকার শীর্ষে কলা

২০২২ অর্থবছরে ৮৮ হাজার ৯৩৮ হেক্টর জমিতে ২৯.৭৯ লাখ টন কলা উৎপাদন করেছিল কৃষকরা। বছরের ব্যবধানে কলার উৎপাদন বেড়েছে ৯.১৯ লাখ টন।

যদিও ২০২২ অর্থবছরে কলা চাষের জমি ২ হাজার ৫২৯ হেক্টর কমেছে, তবে এর উৎপাদন আমের চেয়ে বেশি ছিল।

নরসিংদী, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া- এ পাঁচটি জেলায় ১৫.৯১ লাখ টন কলা উৎপাদন হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের ৫৩.৩৯ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ৯ হাজার টন কলা উৎপাদন হয়েছে নরসিংদীতে। গত অর্থবছরে মোট ফল উৎপাদনের প্রায় ২০.৭৮ শতাংশ কলা ছিল, তারপর তরমুজ (১৭.৪৫ শতাংশ), আম (১৬.৪ শতাংশ), কাঁঠাল (১৩.২১ শতাংশ), এবং পেঁপে (৪.৯৮ শতাংশ)।

২০২২ অর্থবছরে মোট ফল উৎপাদনের প্রায় ৭৩ শতাংশই এই পাঁচ ফল। গত অর্থবছরেও একই আধিপত্য ছিল এ ফলগুলোর।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, নতুন কলার বাগান করেছেন কিছু কৃষক। আবার কেউ পুরনো বাগানে নতুন গাছ লাগিয়েছেন।

তিনি বলেন, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাচ্ছেন। এজন্যই নরসিংদীতে উৎপাদনে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, মাঠে কাজ করছে অধিদপ্তরের কর্মীরা। তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। কৃষকরাও কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদিত ফল ছিল আম(২৫ লাখ টন)। যা চলতি বছরে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

২০২২ অর্থবছরে ২.০৩ লাখ হেক্টর জমিতে ২৩.৫ লাখ টন আম উৎপাদন হয়েছিলো। যেখানে হেক্টর প্রতি ফলন এক টন কমে ১১.৫৮ টন হয়েছে।

শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলাগুলো হলো- নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বান্দরবান এবং নাটোর। এলাকাগুলোতে ১০.৬ লাখ টন আম উৎপাদন হয়েছে। যা মোট উৎপাদনের ৪৫ শতাংশ।

জেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে নওগাঁয়।

ফল উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। এ ফলের উৎপাদন গত বছরে ছিল প্রায় ১৮.৬৯ লাখ টন। চলতি বছরে তা বেড়ে ১৮.৯৩ লাখ টন হয়েছে।

দেশে মোট ৬২ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছিল কাঁঠাল। আর প্রতি হেক্টরে ফলন ছিল ৩০.৪ টন।

শীর্ষ পাঁচটি কাঁঠাল উৎপাদনকারী জেলা হলো- গাজীপুর, জামালপুর, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং ময়মনসিংহ।

উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তরমুজ। এ ফলটির উৎপাদন ৭.২২ লাখ টন বৃদ্ধি পেয়ে চলতি বছরে ২৫.০১ লাখ টনে পৌঁছেছে। যা গত বছর ছিল ১৭.৭৯ লাখ টন।

সারাদেশে ৬৩ হাজার ১৪৪ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছিল এ ফল। যেখানে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ছিল ৩৯.৬ টন, যা সব ফলের মধ্যে সর্বোচ্চ।

২০২১ সালে প্রতি হেক্টরে ফলন ছিল ৪১.০৪ টন। আর ৪৩ হাজার ৩৪৭ হেক্টর জমিতে ফল চাষ করেছিল কৃষকরা।

ভোলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান ওরিসুল কবির দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে ফলের দাম বেশি হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

তিনি জানান, “বার্ষিক উৎপাদন প্রতি বছর আগের বছরের রেকর্ড ভাঙছে। আমরা মাঠের ফলন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

এর আগে ২০২০ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে ১৪.৫৩ লাখ টন তরমুজ চাষ হয়েছিল।

২০২২ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৯৪৪ হেক্টর জমিতে ৭.১৪ লাখ টন ফল উৎপন্ন করে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে পেঁপে।

২০২১ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে ৬.৮ লাখ টন পেপে উৎপাদন হয়েছিল। ফলটির হেক্টর প্রতি ফলন আগের বছরের ২৪.৭৫ টন ছিল। চলতি বছর তা বেড়ে ২৫.৫৫ টন হয়েছে।

শীর্ষ পেঁপে উৎপাদনকারী জেলা ছিল বান্দরবান। যেখানে উৎপাদন ১.১৮ লাখ টনে পৌঁছেছে। তালিকায় এরপরেই রয়েছে রাজশাহী, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটি এবং মানিকগঞ্জ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, গত দুই-তিন বছর ধরে কৃষকরা কলা ও তরমুজের খুব ভালো দাম পাচ্ছেন। আর কৃষকরা এমন ফলই চাষ করে যা সবচেয়ে বেশি লাভ দেয়।

ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি আশ্চর্যজনক নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত তিন বছরে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে প্রতি পিস কলা গড়ে ১০ টাকা এবং প্রতি কেজি তরমুজ ৪৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একটি মাঝারি থেকে বড় তরমুজ বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায়।

গত অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৮৭ টন ফল রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।