সামিউর রহমান
রাজধানীর মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরের আশপাশের এলকায় ফের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন জমজমাট। কারণ করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দর্শকদের চলমান বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ গ্যালারিতে বসে দেখার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
অবশ্য, করোনার সতর্কতায় দর্শকের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে বিসিবি। যদিও, ৬০০ দিনেরও বেশি সময় পর স্টেডিয়ামের চারপাশের স্বাভাবিক জনসমাগমের দৃশ্য আবারও দেখা যাচ্ছে, যা দেশে মহামারির আঘাত হানার আগে ক্রিকেট ম্যাচের সময় সাধারণ দৃশ্য ছিল।
স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা, বিশেষত মিরপুর-১০ ও মিল্ক ভিটা রোডের আশপাশে পতাকা, রিস্টব্যান্ড, হেডব্যান্ড, জার্সি, খেলনা বাঘের মতো বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করছেন হকাররা।
ছোট চায়ের স্টল আর খাবারের দোকানগুলোতেও শুক্রবার সকালে দেখা গেছে ব্যস্ততা। কারণ, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রিকেট ভক্তরা স্টেডিয়ামের চারপাশে জড়ো হয়, যারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখার জন্য স্টেডিয়ামের গেট খোলার অপেক্ষায় ছিল।
কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বেআইনি হলেও ম্যাচ শুরুর আগেই স্টেডিয়ামের চারপাশে এটি একটি সাধারণ দৃশ্য এখানে। কারণ, যে কেউ ম্যাচের দিন শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চারপাশে টিকিট-বিক্রেতাদের কথা উচ্চস্বরে শুনতে পাবে। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ থেকে তাও ছিল বন্ধ।
কাউন্টার থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই টিকিট উধাও হয়ে যাওয়ায় সেই টিকিটই রাস্তায় বেশি দামে বিক্রির চিত্র এখন আবারও ফিরে এসেছে।
এক পতাকা বিক্রেতা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, তিনি খুব খুশি; কারণ জনসমাগম মানেই ব্যবসা।
তিনি আরও বলেন, আমি খুব খুশি, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। ক্রিকেট ম্যাচের সময় আমি স্টেডিয়াম এলাকায় পতাকা ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করতাম, কিন্তু গত দেড় বছর ধরে স্টেডিয়ামের ভেতরে দর্শকদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে আমি রিকশা চালানো, ফলমূল ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন আমি আমার আসল ব্যবসায় ফিরে এসেছি, কারণ ক্রিকেট ভক্তরা আবারও ফিরে এসেছে।
এক জার্সি বিক্রেতাও দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, তার বিক্রিও সন্তোষজনক এবং ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট ম্যাচেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে তিনি চট্টগ্রামে যাবেন।
তিনি বলেন, আমি আগে এ ব্যবসা করতাম, কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমি আমার পুরনো ব্যবসায় ফিরে এসেছি। আমি রংপুরে এসব জার্সি তৈরি করি, ম্যাচের আগে ঢাকায় এসে রিকশার গ্যারেজে থাকি।
লোক সমাগম বাড়ায় স্টেডিয়ামের আশেপাশের ছোট ছোট খাবারের দোকান, ফাস্টফুডের দোকান এবং চায়ের স্টলেও বিক্রি বেড়েছে। স্টেডিয়ামের ভেতরে স্ন্যাকস বিক্রির স্টল পাওয়া বিক্রেতারাও দীর্ঘদিন পর তাদের ব্যবসা চালানোর সুযোগ পেয়েছেন।
ফেস পেইন্টিংও উৎসাহী ক্রিকেট ভক্তদের একটি জনপ্রিয় অভ্যাস। যখন ক্রিকেট ম্যাচ চলে তখন কিছু মুখ-চিত্র শিল্পীরও আয়ের পথ খোলে।
মিরপুর বাংলা কলেজের এক ছাত্র, যিনি পার্টটাইম ফেস পেইন্টার হিসাবে কাজ করেন, তিনি দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, এখন তিনি কিছু গ্রাহক পাচ্ছেন।
বিসজনেস পোস্ট’কে তিনি আরও বলেন, আমি একজন ছাত্র, কিন্তু আমি ফেস পেইন্টিং করতে পারি। ম্যাচের দিনগুলোতে পেইন্ট আর ব্রাশ নিয়ে আসতাম। আমার কোন নির্দিষ্ট চার্জ নেই, কিন্তু আমার পেইন্টের কাজ করার পরে লোকেরা আমাকে কিছু টিপস দিত, যা আমার জন্য অতিরিক্ত আয়ের একটি ভাল উৎস ছিল। কিন্তু করোনার কারণে জনসমাগম বন্ধ করায় আমার আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন স্টেডিয়ামে আবারও খেলা শুরু ও দর্শকদের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার অনুমতি দেয়ায় আমার কাজ আবারও শুরু হয়েছে।