মেহেদী হাসান
পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সহায়তার পরও ২৭ মাসের মাথায় ফের ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বা মন্দ ঋণ ছাড়িয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনপিএল’র পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকার বেশি, যা মোট বকেয়া ঋণের ৮.১৮ শতাংশ।
গত জুনে এনপিএল রেকর্ড করা হয় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এরপর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি বেড়েছে আরও ১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা।
এনপিএল বা মন্দ ঋণ ২০১৯ সালের প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। ওই সময় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজর ৪২৫ কোটি টাকা। এরপর একই বছরের সেপ্টেম্বরে এটি এ যাবতকালের সর্বোচ্চে পরিমাণে পৌঁছে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল গ্রাহকের ঋণের কিস্তি স্থগিতের সুবিধা দেয়ায় গত বছর মন্দ ঋণের পরিমাণ কমে গেছে।
কিন্তু এ বছর ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রাহকদের সুবিধা দেয়ায় এনপিএল বেড়েছে বলেও মনে করেন তারা।
ব্যাংকাররা বলছেন, চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এনপিএল বেড়েছে। কারণ, বেশিরভাগ ব্যাংক মন্দ গ্রাহকদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা স্থগিত করেছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা মন্দ গ্রাহকদের জন্য ওই সুবিধা বাড়াইনি। এটিই ক্রমবর্ধমান এনপিএলের প্রধান কারণ।
তার ভবিষ্যদ্বাণী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি ব্যাকআপ এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আগামী দিনে মন্দঋণ আরও বাড়তে পারে। করোনার কারণে ক্ষতির মুখে গত বছর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের কিস্তিতে স্থগিত সুবিধা পায়। এছাড়া, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে চলমান স্থগিত সুবিধা অব্যাহত থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ ব্যাংকার বলেন, মোরেটোরিয়াম সুবিধা আর বাড়ানো উচিত নয়। তিনি বলেন, ২০২০ সালের শুরু থেকে করোনা মহামারির যে বিরূপ প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাধাগ্রস্ত করে, তা এখন কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরায় চালু হয়েছে। যদিও, উদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধে খোঁড়া অজুহাত দেখাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকটি শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঋণ স্থগিতকরণ সুবিধা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে, রাষ্ট্র-চালিত ব্যাংকগুলোর এনপিএল দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ১৬.৩৮ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের ২০.০৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকের এনপিএল ৫০ হাজার ৭৪৩.১৪ কোটি টাকা, বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৬৯১.৭৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
আর ব্যাংকিং খাতে মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১.৫৮ কোটি টাকা।