চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৪ শতাংশ। ওই মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩.৩৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় মাত্রায় চলে আসা এবং নিয়মিত রপ্তানি বাজারগুলো পুনরায় চালু হওয়া বেড়েছে রপ্তানি আয়।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরের আগস্টে দেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছরের আগস্টে ১৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩.৩৮ বিলিয়ন ডলার।
যদিও রপ্তানির এ পরিমাণ আগস্টের জন্য নির্ধারিত ৩.৭১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮.৮৪ শতাংশ কম।
এছাড়া, আগস্টে ভালো হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কিছুটা কমেছে রপ্তানি আয়। এ সময়ে ৬.৮৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ০.৩১ শতাংশ কম। গত বছরের এ সময়ে ৬.৮৭ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, করোনা মহামারি সঙ্কট কিছুটা কাটিয়ে এবং গণটিকা কার্যক্রমের পর নিয়মিত রপ্তানি বাজার পুনরায় চালু হওয়ায় বেড়েছে রপ্তানি আয়। রপ্তানি বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা তাদের।
এখনকার রপ্তানি আয়ের পরিমাণ, করোনা মহামারি আসার আগের আয়ের প্রায় সমান বলেও বিবেচনা করছেন রপ্তানিকাররা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ঈদু আজহার কারণেই আগস্ট মাসে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, শিপমেন্ট পরবর্তী মাসে পিছিয়ে দেয়ার কারণে ঈদের মাসে সাধারণত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে যায়।
জুলাই-আগস্টের গড় রপ্তানি আয় কমেছে ১.২৭ শতাংশ। যা ওই দুই মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬.১৬ শতাংশ কম।
আগস্টে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ছিল ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের আগস্টে ছিল ২.৪৬ বিলিয়ন ডলার। তবে, জুলাই মাসে এই খাতটি আয় করে ৩.২৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.০২ শতাংশ কম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) তথ্য বলছে, তৈরি পোশাক খাত আগস্টে আয় করেছে ১.১৫২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের আগস্টে ছিল ১.১০ বিলিনয়ন ডলার। অন্যদিকে, নিটওয়্যার খাত ১৭.২৯ শতাংশ বেড়ে ১.৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা আগের বছর ছিল ১.৩৬ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলী শামীম এহসান মনে করেন, কাঁচামাল এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানির পরিমাণ বেশি দেখাচ্ছে। রপ্তানিকারকদের মুনাফা কম হয়েছে বলেও দাবি তার।
ফজলী শামীম এহসান দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, দেশের নিয়মিত রপ্তানি বাজারগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এটি রপ্তানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
দেশীয় টেক্সটাইল খাতেও গত দুই মাস ইতিবাচক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। জুলাই-আগস্টে এ খাতে ৪.১৮ শতাংশ বেড়ে আয় হয়েছে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছিল ১৬৮ মিলিয়ন ডলার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খাতটি গত দুই মাসে ১২.৯১ শতাংশ রপ্তানি বেড়ে ১৭৪. ৭১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ১৫৪.৭৪ মিলিয়ন ডলার।
তবে গত দুই মাসেই রপ্তানিতে মন্দা চলছে পাট ও পাটজাত দ্রব্য খাতে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, গত মৌসুমে কাঁচা পাটের দাম বেশি ছিল। এ কারণে বায়াররা নতুন অর্ডার দেয়নি।
বাংলাদেশ পাট পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির পরিচালক এসরাত জাহান দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, বর্তমানে কৃষকরা তাদের নতুন কাঁচা পাট সংগ্রহ করেছেন এবং দামও বেশ সহনীয়। আশা করছি নতুন অর্ডার আসবে এবং রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) মতে, ৩৪.৬৬ শতাংশ কমে পাট ও পাটজাত দ্রব্য খাত থেকে জুলাই-আগস্টে রপ্তানি আয় হয়েছে ১২৭.৬৭ মিলিয়ন ডলার। যা গত বরের একই সময়ে ছিল ১৯৫.৩৯ মিলিয়ন ডলার।