প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

বকেয়া না পেলে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা কেনার অর্থ দেবে না সিএমসি

হাসান আরিফ ও আশরাফুল ইসলাম রানা
৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৫:০৩ | আপডেট: ২ years আগে
বকেয়া না পেলে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা কেনার অর্থ দেবে না সিএমসি

বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় পায়রা কোল ফায়ারড পাওয়ার প্ল্যান্টে কোল সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) চীনা পার্টনার সিএমসি। এতে দেশের বৃহত্তম পাওয়ার প্ল্যান্টটি পরিচালনা হুমকির মুখে পড়েছে।

গত ২৫ জানুয়ারি পাওয়ার এনার্জি এন্ড মিনারেল রিসোর্সেস মিনিস্ট্রিতে পাঠানো এক অতি জরুরি লেটারে একথা জানিয়েছে পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।

বিসিপিসিএল বলছে, জরুরিভিত্তিতে কয়লার বিল সংক্রান্ত সিএমসির ১৫১.৫৩ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করলে কামিং সামারে পাওয়ার প্ল্যান্টটি বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি বকেয়া অর্থ পরিশোধের পরও সিএমসি কয়লা আমদানিতে পুনরায় অর্থায়ন করবে কি-না সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিসিপিসিএল।

রোববার বিসিপিসিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ এম খোরশেদুল আলম দ্যা বিজনেস পোস্টকে বলেছেন, পিডিবি (বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখা ও ডলার সংকটের কারণে সিএমসির আংশিক বিল অনেকদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। এ কারণে ১ জানুয়ারি থেকে কয়লা আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে বিল শোধ করা যাবে। তখন সংকট কেটে যাবে।

পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টের ঋণদাতা চীনা এক্সিম ব্যাংকের লোন পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে খোরশেদুল আলম বলেন, গত ডিসেম্বরে সর্বশেষ কিস্তি দেয়া হয়েছে। এখনো সমস্যা হয়নি। তবে পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হলে আর্থিক ক্ষতি হিসেবে ঋণের অর্থ সরকারকে পরিশোধ করতে হবে বলে জানান তিনি।

২০২০ সালে চালু হওয়া পটুয়াখালীর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চীন ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ মালিকানায় নির্মাণ করা হয়েছে। পায়রায় মালিকানা কোম্পানি বিসিপিসিএলের ৫০ ভাগ শেয়ার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি সিএমসি বাঁকি ৫০ ভাগের শেয়ারহোল্ডার বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল)।

সম্প্রতি কয়লার অভাবে চালু হওয়ার মাত্র সাতাশদিন পর বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের রামপাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্ল্যান্ট। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের সমান অংশীদারিতে নির্মাণ করা হয়েছে। এ সংকট না কাটতেই জানা যায়, ডলারের অভাবে পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টে কয়লা সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। তবে পূর্বের মজুদ দিয়ে এখনো কেন্দ্রটি চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বিসিপিসিএল বলছে, জানুয়ারিতেই সিএমসির বিল পরিশোধ করে আবার নতুন এলসি করা হলে কয়লা আসতে ৪০-৪৫ দিন লাগবে। কিন্তু পায়রায় সর্বসাকল্যে ১ মাসের জন্য কয়লার মজুদ রয়েছে।

বিসিপিসিএলের ম্যানেজিং ডিরেকটর এ এম খোরশেদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় পরিচালনার জন্য গড়ে প্রতিদিন ৫০৫০ ক্যালোরিফিক ভ্যালুসম্পন্ন ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন, যা মাসে ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এই বিপুল পরিমাণ কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতিনিয়ত আমদানির মাধ্যমে যোগান দেয়া হয়। পায়রা সমুদ্র বন্দরের সীমাবদ্ধতার কারণে বাল্ক ক্যারিয়ার এর পরিবর্তে লাইটার ক্যারিয়ার এ বহুসংখ্যক চালানে বিভক্ত করে নিয়মিত কয়লা আমদানি করতে হয়।

ফলে, কয়লা আমদানি সংক্রান্ত ব্যয়, যথা- বৈদেশিক মুদ্রায় কয়লার মূল্য ও জাহাজের ভাড়া এবং দেশীয় মুদ্রায় কাস্টম ডিউটি, পোর্ট চার্জ, হ্যান্ডলিং চার্জ ইত্যাদি, তাৎক্ষণিকভিত্তিতে পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান সার্বক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা আবশ্যক।

প্রকল্প ঋণদাতা এক্সিম ব্যাংক অব চায়না (সিএক্সিম) শর্তানুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সম্পূর্ণ অপারেটিং সময়কাল এর জন্য কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করার শর্ত আরোপ করে। সে মোতাবেক ২০১৯ সালের জুনে ইন্দোনেশিয়ার পিটি বায়ান রিসোর্স টিবিকে (বায়ান) এর সাথে ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি করা হয়।

প্রাথমিকভাবে বিসিপিসিএল নিজস্ব অর্থায়নে কমিশনিং পর্যায়ে স্বল্প পরিমাণে কয়লা আমদানিতে সক্ষম হলেও কার্যকারী মূলধন সংকট ও বিদ্যুৎ বিক্রয় অর্থ প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রীতার কারণে নিয়মিত কয়লা আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য বিসিপিসিএল-এর ৫০ ভাগ শেয়ার হোল্ডার 'সিএমসি পিটি বায়ান কে প্রয়োজনীয় অর্থ ১৮০ দিন বিলম্বে প্রদানে রাজি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, সিএমসি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কয়লার মূল্য পরিশোধ করে এসেছে। এ অবস্থায় ২৯ ডিসেম্বর বিসিপিএলকে পাঠানো এক চিঠিতে সিএমসি জানিয়েছে, জানুয়ারি ২০২৩ হতে তারা কোনো কয়লা আমদানির বিল পরিশোধ করবে না। বকেয়া অর্থ পরিশোধ স্বাপেক্ষে পুনরায় কয়লা সরবরাহে অর্থায়ন করা হবে কি-না তা পরবর্তীতে জানাতে চেয়েছে সিএমসি। এ অবস্থায় গত ১লা জানুয়ারি, ২০২৩ থেকে কয়লা আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।