বাজারে ৫ লিটারের কোন তেলের বোতল মিলছে না। দুই ও এক লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। খুচরা বিক্রেতা ও ডিলারদের অভিযোগ ঈদের আগে সরকার দাম না বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মিল মালিকদের। তাই ঈদের পর তেলের দাম বাড়তে পারে।
ইতোমধ্যে তার কিছু ইঙ্গিতও বিভিন্ন ব্র্যান্ড কোম্পানির বিক্রিয় প্রতিনিধিরা দিয়েছেন। বাড়তি দামের আশায় মিল মালিকরা তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। চাহিদার ১০ শতাংশ তেলও তারা সরবরাহ করছে না। তবে ব্র্যান্ড কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, সরবরাহ কিছুটা কমলেও তেল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মুগদাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বোতজলজাত তেলের দাম না বাড়লেও সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে। বাজারগুলোতে ৫ লিটারের কোন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া কোন দোকানে ১ লিটার আবার কোন দোকানে ২ লিটারের কিছু তেলের বোতল রয়েছে। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহও খুব কম। এতে খোলা তেলের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১২-১৪ টাকা পর্যন্ত।
সেগুনবাগিচা বাজারের দ্বিতীয় তলায় ঘুরে দেখা যায়, বাজারের ৮টি দোকানের কোনটিতেই ৫ লিটারের বোতল নেই। দুই থেকে তিনটি দোকানে এক লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এসব দোকানে দুই লিটারের তেলের বোতল নেই। এছাড়া কয়েকটি দোকানে দুই লিটার তেল থাকলেও নেই এক লিটারের বোতল। বাকি কয়েকটিতে তেলই নেই। বাজারের একটি দোকানে খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাজারের আল্লাহর দান স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, তেলের বাজারে হাহাকার চলছে। চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করছে না ডিলার প্রতিনিধিরা। আমি দুই লিটারের কয়েক কার্টন তেল কিনতে পেরেছি।
তা দিয়েই ক্রেতার চাহিদা পূরণ করছি। তিনি বলেন, একটি ব্র্যান্ড কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আমাকে জানিয়েছেন, ঈদের পর তেলের দাম বাড়ানো হবে। প্রতি লিটার তেলের দাম বেড়ে ১৮৫ হবে। তাই আপাতত কম দামে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের সরকার নির্ধারিত দাম ১৬০ টাকা, দুই লিটার ৩২০ টাকা ও পাঁচ লিটার ৭৮৫ টাকা। শুধু বোতলজাত তেল নয়, চাহিদা মতো মিলছে না খোলা ভোজ্য তেলও।
চাহিদার ৫০ শতাংশেরও কম সরবরাহ করছে পাইকার ব্যবসায়ীরা। এছাড়া খোলা তেলের দামও বাড়ানো হয়েছে কেজি প্রতি ১২-১৪ টাকা। রাজধানীর বাজারগুলোতে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮২-১৮৫ টাকা কেজি। যা সপ্তাহ পূর্বে ছিল ১৬৮-১৭০ টাকা কেজি। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৭৫ টাকা কেজি দরে। যা সপ্তাহ পূর্বে ছিল ১৬০-১৬২ টাকা কেজি। মুগদা বাজারের মেসার্স ভুইয়া এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী শিবলী সাইদি বলেন, নাম মাত্র তেলের সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। খোলা তেলের সরবরাহ আসছে অর্ধেকেরও কম। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সংকট ও দাম বেশি বলে পাইকরি ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নিচ্ছে।
’বিভিন্ন ব্র্যান্ড কোম্পানির ডিলাররা বলছেন, তারা ব্যাংকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না মিলগুলো থেকে। চাহিদার ৫-৭ শতাংশ বোতজলজাত তেল সরবরাহ করছেন ডিলাররা।
রাজধানীর শান্তিনগরের এজেড এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ডিলার প্রতিষ্ঠানের সত্তাধিকারী জিয়াউদ্দীন বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, আমি একটি মিল থেকে ৫ লিটারের তেল নিতে তিন দিন আগে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমার ব্যাংক জমার রিসিট নিচ্ছে না এবং বিক্রয় আদেশ (এসও) দিচ্ছে না। আগের ৪২৫ কার্টন সরবরাহ আদেশের মধ্যে মাত্র ২৫ কার্টন তেল সরবরাহ করেছে। বাকিটা কবে দিবে তারও নিশ্চয়তা নেই।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম বলেন, পরিশোধন কারখানাগুলো থেকে শতভাগ সরবরাহ না থাকলেও ৮০ শতাংশ চালু আছে। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজাওে তেলের দাম অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে ভোজ্যতেল মিলের বাইওে কেউ মজুদ করছে কি না দেখতে হবে। অন্যথায় এতটা সঙ্কট হওয়ার কথা নয়।
সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ সংকট ও দাম বৃদ্ধির সঙ্গে দাম বাড়ছে দেশের অন্যতম ভোজ্য তেল সরিষার তেলের দামও। এক মাস আগে রাধুনিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সরিষার তেলের ২৫০ মিলিটার বোতলের দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। এক লিটার বোতলের দাম ছিল ২৮০ টাকা, লিটারে ৮০ টাকা বেড়ে এখন ৩৬০ টাকা করা হয়েছে।