বাজারে চলমান অস্থিরতার মধ্যে-ই সুবিধাবাদী ব্যবসারীরা বেশি দামে চিনি বিক্রি করে নিজেদের সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চিনির নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ভোক্তারা অভিযোগ করে বলেছেন ঘোষণার পরপরই বাজারে বেড়ে গেছে চিনির দাম।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ) আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চিনির দাম ৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তবে বাজার ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন এরই মাঝে চিনি কিনতে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি মূল্য।
ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী মাস থেকে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির দাম পড়বে ১০৭ টাকা এবং পরিশোধিত প্যাকেজ চিনির দাম হবে ১১২ টাকা। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সংকটের মধ্যেই চিনির এ বর্ধিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
নগরীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ ও রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে নতুন দাম কার্যকর হতে কয়েকদিন বাকি থাকলেও খুচরা বিক্রেতারা এরই মাঝে বাড়তি দামে চিনি বিক্রি করছেন।
ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, বিএসআরএ ঘোষণার পরপরই খুচরা দোকানে চিনি, বিশেষ করে প্যাকেটজাত চিনি শেষ হয়ে গেছে।
যে কয়েকটি দোকানে মিলছে চিনি সেখানেও ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
খুচরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন “গত কয়েকদিন ধরে দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কিছু দোকানে পণ্য আছে, তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। শান্তিনগর কাঁচাবাজার থেকে ২ কেজি প্যাকেটজাত চিনি কিনলাম ১১০ টাকায়। গত কয়েকদিন ধরে চিনির বাজার অস্থিতিশীল এবং পাইকারি দোকানে মজুত শেষ হয়ে গেছে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ইমা স্টোরের মালিক রহিম আহমেদ দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, “গত এক সপ্তাহের মধ্যে পাইকারের কাছ থেকে মাত্র দুই ব্যাগ চিনি পেয়েছি এবং সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আমি আবার নতুন করে পণ্য পাওয়ার অপেক্ষা করছি।”
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি মুদি দোকানে চিনি খুঁজছিলেন নাফিউল আলম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা।
তিনি বলেন, “হঠাৎ চিনির দাম বেড়ে গেছে। এখন আর পাওয়া যায় না। আমার প্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ কেজি চিনি দরকার। এই পরিমাণ চিনি পাওয়াই কঠিন হয়ে গেছে।”
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এই চাহিদা প্রায় সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর, যা সাম্প্রতি সময়ে হ্রাস পেয়েছে।
আখের মূল্য বাড়ায় আগে থেকেই কিছুটা বাড়তি ছিলো চিনির দাম। তার উপর ডলারের দাম বৃদ্ধি চিনির আমদানি ব্যয় বাড়িয়েছে। ফলে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
রামপুরা কাঁচা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কামাল আহমেদ বলেন, “কিছুদিন আগে আমার দোকানে চিনি ফুরিয়ে গেছে। পাইকাররা ঘাটতি দেখিয়ে আমাদের পণ্য সরবরাহ করছে না।”
এদিকে প্যাকেটজাত সাদা চিনির সংকট থাকলেও ব্যবসায়ীরা লাল চিনি বেশি দামে বিক্রি করছেন।
মালিবাগের বাসিন্দা রিয়াদ হোসেন বলেন, “মালিবাগের কোথাও সাদা চিনি খুঁজে পাইনি। প্যাকেট লাল চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০ টাকায়। আমি বাধ্য হয়েছি অধিক দামে লাল চিনি কিনতে।”