মোহাম্মদ নাহিয়ান
প্রান্তিক থেকে অভিজাত, দরিদ্র থেকে ধনী; সবার কাছেই ক্যান্ডি আর চকলেট খুব প্রিয়। যে কারণে দেশে প্রতি বছর ১০ শতাংশ বাজার বাড়ছে এসব খাদ্য পণ্যের।
দেশীয় উৎপাদনকারীদের তৈরি ক্রিমযুক্ত এসব নরম পণ্য বিদেশি ব্র্যান্ডের বিপরীতে দেশের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একই সাথে রপ্তানির জন্য বিভিন্ন পণ্যে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো।
সুস্বাদু ও কম দামের বৈচিত্র্যময় স্বল্প চিনির পণ্য, ভোক্তাদের স্বাদ পরিবর্তন এবং আয় বৃদ্ধি- দেশীয় বাজারে চকলেটের বিক্রি বৃদ্ধির মূল কারণ।
ক্যান্ডি ও চকলেটের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোম্পানিগুলোর মতে, তাদের ব্যবসা প্রতি বছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মোট বাজারের আকার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ লজেঞ্জ ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিসুর রহমান বাদশা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, সারাদেশে ক্যান্ডি ও চকলেট উৎপাদনের প্রায় ১০০টি কারখানা রয়েছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামীণ এলাকায় দেশীয় পণ্যের চাহিদা বেশি। কারণ, এসব পণ্যের দাম বিদেশি ব্র্যান্ডের তুলনায় তুলনামূলক কম। ললিপপ ও বাবল গাম বাচ্চাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিক্রির দিক থেকে প্রাণ-আরএফএল বাজারে শীর্ষে রয়েছে। বিদেশি পণ্যগুলো মূলত শহুরে গ্রাহকদের কাছে পছন্দের।
প্রাণ-আরএফএল, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেনিশ, পারফেটি ভ্যান মেলে, নেসলে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ড, তিতাস, এলসন এবং আরও কয়েকটি কোম্পানিও বাজারে রয়েছে।
দেশীয় উৎপাদকরা বলছেন, চিনির দাম বৃদ্ধির কারণে সমস্যায় পড়েছেন তারা। কারণ, মিষ্টি আইটেমগুলোর জন্য এটি-ই মূল উপাদান। চিনির দাম বৃদ্ধি এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দেশীয় প্রস্তুতকারক অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ অলিনো ওয়েফার, নক চকলেট কোটেড ওয়েফার, চকিটো টেডি বিয়ার, টফিটো চকলেট জার, রসালো লিচু, সবুজ আম, আনারস, পাকা আম, চকিটো হোয়াইট, তেতুল ক্যান্ডি, চকিটো চকলেট বার, ঝাল তেতুল এবং সুস্বাদু দুধসহ বিভিন্ন স্বাদের পণ্য তৈরি করে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল জানান, তারা ১৯৯৭ সাল থেকে জনপ্রিয় এসব পণ্য বাজারজাত করে আসছেন।
কামাল বলেন, বর্তমানে আমরা দেশীয় বাজারে ভালো করার পর রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছি, যেখানে আম ক্যান্ডি এবং ললিপপ ভালো বিক্রি হয়। ভারত ও নেপালে রপ্তানি করার পাশাপাশি আমরা আমাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যেও পাঠাচ্ছি।
দ্য বিজনেস পোস্ট-এর আলাপকালে অনেক দোকানদার জানান, তাদের চকলেট বিক্রি ভাল চলছে। কারণ, মহামারি পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। এছাড়াও, তরুণ প্রজন্ম এখন উপহার হিসাবেও ক্যান্ডি পছন্দ করে, যা তাদের বিক্রি বাড়াচ্ছে।
গত মার্চ মাসে টেকসি রিসার্চের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী ক্যান্ডির বাজার ৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও, বিদ্যমান পণ্যগুলোতে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং বিশ্বব্যাপী চকলেটের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ওই সময়কালে এটি ৫ শতাংশের বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাবে।
অবশ্য এটিও সত্য, স্থুলতা এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ সম্পর্কে মানুষের ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য উদ্বেগ ক্যান্ডির বৈশ্বিক বাজার বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তবে এ উদ্বেগ এড়াতে চিনি-মুক্ত এবং কম ক্যালোরিযুক্ত ক্যান্ডি তৈরি করা হচ্ছে।
অঞ্চল বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী চকলেটের বাজার উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া-প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
এ অঞ্চলগুলোর মধ্যে ক্যান্ডির বিক্রয় ও চাহিদার বিবেচনায় উত্তর আমেরিকা এবং এর পরেই রয়েছে ইউরোপ।
কম খরচের কারণে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় চিনির চকলেটের প্রাধান্য পেয়েছে।
ওই প্রতিবেদন বলছে, ২০২৬ সালের মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাবে চকলেটের বাজার।
দেশি ক্যান্ডি ও চকোলেট ছাড়াও অনেক বিদেশি ব্র্যান্ডও দেশীয় বাজারের একটা বড় অংশ দখল করেছে। বর্তমানে, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড, রুট টু মার্কেট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আইএনটেক ডিস্ট্রিবিউশন, তাহের ট্রেডিং এবং আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি উচ্চবিত্তের গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দেশে বিদেশি ক্যান্ডি ও চকলেট আমদানি করছে।
দেশীয় বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডের চকলেটের মধ্যে রয়েছে- ক্যাডবেরির ডেইরি মিল্ক , কিট ক্যাট, ম্যালো ওয়ার্ল্ড, টেক, ব্রেক, কিটকাট চাঙ্কি ক্যারামেল, কিটক্যাট আরবি কফি, কিটক্যাট ৭০ ডার্ক চকলেট, আমুল মিল্ক চকলেট।
এসব ক্যান্ডি ও চকলেট মূলত ভারত, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয়।
ভারত ভিত্তিক বাজার গবেষণা সংস্থা মর্ডর ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের ক্যান্ডি বাজারের প্রধান কোম্পানি হলো- প্রাণ আরএফএল গ্রুপ, পারফেটি ভ্যান মেলে, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এসিআই ফুডস লিমিটেড।