নুসরাত জাহান, পেশায় এনজিও অফিসার। দেশের একটি জীবন বীমা সংস্থায় স্বাস্থ্য বীমা কিনেছেন তিনি। এটি এক হাজার টাকার মাসিক কিস্তিসহ ১০ বছরের মধ্যে ৮টি রোগের চিকিৎসা সহায়তা দেবে। করোনকালীন সময়ে তিনি সংক্রামিত হয়ে এ বীমার আওতায় ৪০ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা পেয়েছেন।
নুসরাত জাহান বলেন, ‘২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আমি করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলাম। আমি সে সময় এ বীমার অধীনে স্বাস্থ্য সুবিধা পেয়েছি। এছাড়াও আমার বাবা-মা এবং স্বামীর স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য এ বীমার ওপর আমরা নির্ভরশীল।’
স্বাস্থ্য বীমার অধীনে বছরে দু’বার স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়। যা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায় বলেও জানান নুসরাত।
নুসরাত জাহানের মতো অনেক সচেতন মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বীমা করতে আগ্রহী। ফলে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্বাস্থ্য বীমা।
বহুজাতিক বীমা সংস্থার কাছ থেকে সেবা গ্রহণকারী ধনমন্ডির বাসিন্দা জাকির হোসেন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ‘মহামারি চলাকালে আমি বুঝতে পেরেছি যে; স্বাস্থ্য বীমা থাকা কতটা জরুরী। আমরা যদি ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরিবর্তে স্বাস্থ্য বীমার জন্য একই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করি;তাহলে আমরা বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবাও পাব। ফলে, আমার মতো প্রতিটি গ্রাহকের এ ধরনের বীমা করে রাখা উচিৎ।’
বর্তমানে দেশে ৩৫টি জীবন বীমা সংস্থা আছে। এরা গ্রাহকদের স্বাস্থ্য বীমা নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে উৎসাহিত করছে।
স্বাস্থ্য বীমা দেশের নিম্ন-আয়ের মানুষদের আর্থিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের সুবিধা-
১৮-৬০ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি এবং একটি নিয়মিত আয়ের উৎস থাকলে দেশের জীবন বীমা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এই নীতি গ্রহণ করতে পারবেন।
এ সব নীতির মেয়াদ ৫, ১০ বা ১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্রিমিয়াম বার্ষিক, ত্রৈমাসিক বা যেকোনো সময়ে জমা দেওয়া যায়। এই নীতির অধীনে, যদি কোনো তালিকাভুক্ত গ্রাহক রোগে আক্রান্ত হন, তিনি চিকিৎসার জন্য আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন। তবে জটিল অসুস্থতার ক্ষেত্রে এ বীমার সর্বোচ্চ পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
মিটলাইফ দেশে স্বাস্থ্য বীমা নীতি প্রদানকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। সংস্থাটির ৫টি স্বাস্থ্য বীমা নীতি রয়েছে। এগুলো হল- ক্রিটিক্যাল ইলনেস ইন্স্যুরেন্স প্রোটেকশন প্ল্যান, ক্রিটিক্যাল ইলনেস উইথ রিটার্ন অফ প্রিমিয়াম সুপার (সিআই রোপ সুপার), মেডিকেয়ার, ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং হসপিটাল কেয়ার। এই নীতির অধীনে গ্রাহকরা ১০-৫২ রোগের জন্য চিকিৎসা সহায়তা পাচ্ছেন।
মিটলাইফ বাংলাদেশের যোগাযোগ শাখার প্রধান সাইফ রহমান বলেন, ‘মিটলাইফের পাঁচটি স্বাস্থ্য বীমা নীতির সবগুলোই গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয়। আমরা হসপিটাল কেয়ার নামে একটি নতুন স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে এসেছি। এই নীতির আওতায় একজন গ্রাহক হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাবেন। এটিও গ্রাহকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।’
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ‘চলতি বছর থেকে আমরা অন্যান্য নীতির সাথে সহযোগী বীমা হিসেবে স্বাস্থ্য বীমা সেবা দিচ্ছি। গ্রাহকরা এখন আমাদের অন্যান্য বীমার সাথে সহচর বীমা হিসাবে স্বাস্থ্য বীমা নিতে পারেন। এই বীমার আওতায় আমরা সাতটি বড় ধরনের রোগের চিকিৎসায় সহায়তা দিচ্ছি। ইতিমধ্যে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেছি।’
আমাদের সংস্থা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ২৫০ টাকায় স্বাস্থ্য বীমা নীতি প্রদান করে। এ নীতির অধীনে, শিক্ষার্থীরা অসুস্থতার জন্য ৮০ হাজার টাকা এবং মৃত্যুর পর তাদের পরিবার দুই লাখ টাকা দাবি করতে পারেন।
স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করার দাবি-
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী চলাকালীন স্বাস্থ্য বীমার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। ইতিমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান পাইলটিং ভিত্তিতে স্বাস্থ্যনীতি চালু করেছে। সরকারের উচিত দেশে স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করা। এটি জনপ্রিয় হলে নীতি নির্ধারকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বীমা খাত আরও প্রসারিত হবে।’