বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া এক বছর সময় শেষ হওয়ার আগেই ২০০ মিলিয়ন ডলারের পুরোটা পরিশোধ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল বীরসিংহে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই এ ঋণ পরিশোধ করবে দেশটি।
ইতোমধ্যেই তার দেশ আইএমএফসহ অন্যান্যদের দারস্থ হয়েছে। ভারতসহ কয়েকটি দেশ শ্রীলঙ্কার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনে এগিয়ে আসছে। তাই ঋণ পরিশোধে তেমন সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির গভর্নর।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সভায় শ্রীলঙ্কার গভর্নরের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আব্দুর রউফ জানান, শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তাই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেয়া শর্তে ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের কাছ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক ঋণের চাপে জর্জরিত দেশটিকে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ চলতি বছর আরও ১ বছর বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেই হিসেবে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধের কথা। তবে এর আগেই দেশটি ঋণ পরিশোধ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
বৈদেশিক ঋণের চাপে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কারেন্সি সোয়াপ নীতি মেনে ঋণ পরিশোধের সময়ও বেধেঁ দেয়া হয়।
তবে ২০২১ সালে চরম সংকটে পড়ে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে এ দ্বীপ রাষ্ট্র। দেউলিয়া ঘোষণার পর শ্রীলঙ্কার থেকে ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।
এবারের বার্ষিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট আশঙ্কা প্রকাশ করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো হয়তো তাদের নেয়া ঋণ ঠিকমত পরিশোধ করবে না।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থান কেমন, সাংবাদিককের এমন প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৩/১৪ শতাংশ। এই হার বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় খুব নগণ্য।
“সুতরাং আমরা ঋণ ঠিকমত শোধ করতে পারবো। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। বৈশ্বিক ঋণমান সংস্থাগুলোর রেটিং অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধে আমরা স্থিতিশীল দেশ। এসব সংস্থা কিন্তু ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই কান্ট্রি রেটিং করে থাকে।”
আব্দুর রউফ আরো জানান, বিশ্বের অন্যতম দুটি বড় ব্যাংক জেপি মরগান ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড নিজে থেকে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি তার সাথে একটি বৈঠক করে এ আগ্রহ প্রকাশ করে।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ব্যাংক দুটো বাংলাদেশকে বিভিন্ন সুবিধা দিতে চায়। আমরা তাদের বলেছি, বাংলাদেশ সরকার যদি কখনো বাণিজ্যক ঋণ নেয় তখন তাদের প্রস্তাব মাথায় রাখা হবে। আমি তাদের প্রস্তাব দিয়েছি তারা যেন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে আরো সহায়তা করে।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রাইভেট সেক্টর যেন ঠিকমতো এলসি খুলতে পারে সে বিষয়ে যেন তারা বেশি নজর দেয়। সেখানে কোন সমস্যা হলে যেন দ্রুত সমাধান করা হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।”
আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে কমনওয়েথভুক্ত দেশগুলোর গভর্নররা মিটিং করবে। এবারের মিটিং-এ সভাপতির দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ।