প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিতে সরকারের ঋণ গ্রহণের হার হ্রাস করতে হবে’

টিবিপি ডেস্ক
১৮ জুন ২০২৩ ১৯:০১:১৭ | আপডেট: ২ years আগে
‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধিতে সরকারের ঋণ গ্রহণের হার হ্রাস করতে হবে’

দেশের আর্থিক খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘোষিত মুদ্রানীতিকে সতর্কতামূলক নীতি হিসেবে মনে করেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার।

রোববার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। 

মোঃ সামীর সাত্তার বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাহিদা, আমদানি কার্যক্রমে নজরদারি অব্যাহত রাখা এবং স্থিতিশীল বাণিজ্য পরিবেশ নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোর উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রিভার্স রেপো ৪.৫০ শতাংশ নামিয়ে আনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রিভার্স রিপো রেট-এর কার্যকারিতা নিয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই, কারণ ইতোপূর্বে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, যা থেকে কাঙ্খিত সাফল্য পরিলক্ষিত হয়নি।

ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ঋণের সুদের হারের সীমা ৯ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং সুদের হার নির্ধারণে ‘শর্ট-টার্ম মোভিং এভারেজ রেট’-এর কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থার ফলে ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণের সুদের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেটি বর্তমান বৈশ্বিক অস্থির অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় বেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। পাশাপাশি এ ধরনের উদ্যোগ বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি করবে।

তিনি বলেন; চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে সরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে ৪৩.৩ শতাংশ, যেটি আগের অর্থ বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ছিল ৪০ শতাংশ। অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০.৯ শতাংশ, যেটি বিগত অর্থ বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ছিল ১১ শতাংশ। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমান ভূ-অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করা হয়েছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মনে করেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রার নিম্নহার এ খাতের প্রত্যাশিত অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে। সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ হ্রাস, সরকারি ব্যয় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনয়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সম্পন্নকরণের মাধ্যমে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহকে হ্রাস করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, ব্যাংক খাত হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের বিপরীতে কর আহরণের মাত্রা বাড়ানোর উপর আরো বেশি হারে জোরারোপ করা প্রয়োজন।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে স্থিতিশীলতা আনয়নে ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তার মনে করেন, একটি সুনির্দিষ্ট বিনিময় হার মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করবে। যদিও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। ইআরকিউ এনক্যাশমেন্ট লিমিট ৫০ শতাংশ হ্রাস এবং ইডিএফ সুদ হার ৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিকল্পে হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা রোধকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কঠোর হতে হবে।

খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ হতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের উপর জোরারোপ করেন ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের জন্য খেলাপি ঋণ হ্রাস করা সম্ভব। খেলাপি ঋণ হ্রাসের জন্য সরকার গৃহীত ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ মূল্যায়নে কমিটি প্রণয়নের জন্য ঢাকা চেম্বার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহকে সংকুচিত করছে, এমতাবস্থায় ডিসিসিআই সভাপতি খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোরারোপ করছে।