মেহেদী হাসান
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প ঋণ বিতরণ বাড়লেও কমেছে ঋণ পুনরুদ্ধারের হার। কারণ, ঋণগ্রহীতারা করোনার কারণে কিস্তি স্থগিতাদেশের সুবিধা ভোগ করছেন। কিন্তু এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ ১২.৩৯ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু ঋণ পুনরুদ্ধার কমেছে ১.৮৯ শতাংশ।
ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক চাহিদা পূরণে শিল্প ঋণ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে, মূলধন ব্যয় ও ব্যবসা বাড়ানোর তহবিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে শিল্প ঋণ বিতরণ হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৫৯৬.৮২ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯৪ হাজার ৮৪৯.৬৬ কোটি টাকা।
যদিও, চলতি বছরের আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় এ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ মাত্র ০.৬ শতাংশ কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্প ঋণ পুনরুদ্ধার হয়েছে ৮২ হাজার ৬৩৭.৭৯ কোটি টাকা, যা গত বছরে ছিল ৮৪ হাজার ২৩২.৭৬ কোটি টাকা।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এমরানুল হক বলেছেন, দেশের অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ায় এবং করোনার আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ায় শিল্প ঋণের চাহিদা বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে, আগামী দিনেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কারণ, ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিল্প সম্প্রসারণ শুরু করেছে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতি উল হাসান বলেছেন, করোনার আঘাতের পর নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও শিল্প সম্প্রসারণে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে।
আমদানি অর্থপ্রদানের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বুঝায় যে, শিল্প খাত করোনার আঘাত থেকে পুনরুদ্ধার করেছে এবং সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ের মধ্যে ক্রেডিট লেটারের নিষ্পত্তি, যা প্রকৃত আমদানি পেমেন্ট হিসেবেও পরিচিত, তা বছরে ৫১.৩৩ শতাংশ বেড়ে ২৩.৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে, শিল্পের কাঁচামাল এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, এ সময়ের মধ্যে ৪৯,১৫ শতাংশ এবং ২৫.৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
মতি উল হাসান বলেন, এ ত্রৈমাসিকে ঋণ পুনরুদ্ধার কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, গ্রাহকরা কিস্তি স্থগিতাদেশের সুবিধা ভোগ করছেন, যা শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।
গত বছরে ঋণগ্রহীতারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত ঋণ স্থগিত সুবিধা উপভোগ করেছেন। এ বছর শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
একই সময়ে, এটি একটি বাস্তবতা যে বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, তিনি বলেন।
দেশের ব্যাংকগুলো সাধারণত শিল্প খাতে দুই ধরনের ঋণ বিতরণ করে, শিল্প মেয়াদী ঋণ এবং শিল্প কার্যকারী মূলধন ঋণ।
এদিকে, শিল্প মেয়াদী ঋণ বিতরণ ৪.০২ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৩৪.২৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কার্যকরী মূলধন ঋণ ১৫.৫৮ শতাংশ বেড়ে ৯১ হাজার ৭৬২.৫৯ কোটি টাকা হয়েছে।
বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, করোনার আঘাতের পর অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার কারণে শিল্প ঋণ বিতরণ বাড়ছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনসুর বলেন, আগামী দিনে শিল্পঋণ বাড়বে এবং এ মাসের পর মন্দ ঋণও বাড়বে। কারণ, গ্রাহকরা কিস্তি স্থগিতাদেশের সুবিধা ভোগ করছেন, যা শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।
এ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ঋণ পুনরুদ্ধার এখন ধীর গতিতে হচ্ছে এবং এটি ব্যাংকের মুনাফাকে প্রভাবিত করবে।
এ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শিল্প মেয়াদী ঋণের পুনরুদ্ধার হয়েছে ১৪.৬৪ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ৯৭৯.৪৭ কোটি টাকা, যেখানে কার্যকরী মূলধন ঋণের পুনরুদ্ধার ৪.৪৬ শতাংশ কমে ৬৯ হাজার ৬৫৮.৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।