আমিনুল ইসলাম একজন মাছ বিক্রেতা। তিনি শহরের গলিতে ফেরি করে শিং, পাবদা ইত্যাদি মাছ বিক্রি করেন। আমিনুল আশা করেছিলেন বৈশাখ উপলক্ষে এদিন ইলিশের বিক্রি কিছুটা বেশি হবে। তাই মঙ্গলবার কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে পাইকারি বাজার থেকে অন্য মাছের সঙ্গে তিনি ৫০ পিস ছোট ইলিশ মাছ কিনেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর খিলগাও ও বাসাবো ঘুরে তিনি মাত্র ২০ পিস ইলিশ মাছ বিক্রি করতে পেরেছেন।
তিনি হতাশ হয়ে বলেন, আগের মতো বৈশাখে ইলিশের চাহিদা নেই। যারা কিনছেন তারা আমিষের চাহিদা পূরণের কথা মাথায় রেখে কিনছেন। বৈশাখ উপলক্ষে নয়।
তিনি বলেন, একেতো রোজা তার উপর নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে তাই মানুষ সৌখিন ও দামি মাছ কিনছেন কম।
কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের হিসাবে, করোনা পূর্ব পয়লা বৈশাখে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টন ইলিশ মাছ বিক্রি হতো। কিন্তু এবছর করোনা না থাকলেও ইলিশ মাছের বিক্রি চাহিদা ও সরবরাহ দুটোই কম। প্রতিদিন কারওয়ান বাজারের কয়েকটি মাছ বাজার মিলে মোট ১০ টন মাছ বিক্রি হয়।
জানা যায়, মৎস্য মন্ত্রণালয় আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও পটুয়াখালী জেলার ৫টি ইলিশ অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট নদ-নদীতে সবধরনের মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করেছে। কক্সবাজাররসহ অন্যান্য এলাকায় ইলিশ ধরা পড়লেও তা পরিমানে খুব কম। একই সঙ্গে মাছের আকারও ছোট (এক কেজি ওজনের চেয়ে ছোট)।
কারওয়ান বাজার সোনালী মৎস্য আড়ৎ মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিলকদ গাজী বলেন, এবার বৈশাখে ইলিশের চাহিদা নেই। এটি রোজার কারণে হতে পারে। করোনার আগে বৈশাখে যে পরিমান ইলিশ বিক্রি হতো তার তুলনায় ৫ ভাগের এক ভাগ বিক্রি হচ্ছে এখন। এখন যতটুকু ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে তা সবসময়ই হয়।
তিনি বলেন, দেশের ইলিশের প্রধান ৫টি কেন্দ্রে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের জালে ইলিশের চেয়ে অন্যান্য জাতের মাছ ধরা পড়ছে বেশি। তাই বাজারে ইলিশ সরবরাহ কম। এতে দামও কিছুটা বেশি।
বাজারে ইলিশের সরবরাহ কিছুটা কম হওয়ায় দামও বেড়েছে। ইলিশ মাছের দাম কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১০০-২০০ টাকা। আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো দামে। মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২০০-১৩০০ টাকা কেজি। যা এক দুই সপ্তাহ আগে ১০০০-১১০০ টাকা কেজি ছিল। এক কেজি ওজনের চেয়ে ছোট ইলিশ মাছ কাওয়ান বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি।
গতকাল রাজধানীর মালিবাগ ও রামপুরাসহ খুচরা বাজারে এক কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হয়েছে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি। ছোট (৭০০-৮০০ গ্রাম) মাছ বিক্রি হয়েছে ১০০০-১১০০ টাকা কেজি।
আমদানিকারক ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (নন প্যাকার) সভাপতি বাবুল আকতার বলেন, দেশের হোটেল-রেস্টুরেন্টে যে ইলিশ বিক্রি হয় তার বেশিরভাগের ওজন দেড় থেকে ২ কিলোগ্রামের বেশি। দেশে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করতেন। গত ২-৩ বছর বৈশাখী উৎসব না হওয়ায় এবার ব্যবসায়ীরা ইলিশ মজুদ করেননি।
এছাড়াও এ বছর রমজান মাসে পহেলা বৈশাখ হওয়ায় ইলিশের চাহিদা কম বলেও মনে করছেন তিনি।