প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

শীর্ষে এমটিবি’র এমডি

ব্যাংক এমডিদের কাড়ি কাড়ি বেতন

সাখাওয়াত হোসাইন সুমন
১৮ মে ২০২২ ১০:২৯:৩১ | আপডেট: ১ year আগে
ব্যাংক এমডিদের কাড়ি কাড়ি বেতন

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা অন্যান্য কর্মচারীদের তুলনায় অনেক বেশি হারে বেতন নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ অপরিবর্তিত থাকছে, কিন্তু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি নাটকীয়ভাবে বেড়েই চলেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) লিমিটেড তার এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমানকে ২০২১ সালে ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বেতন ও সম্মানি দিয়েছে, যা আগের বছর ছিলো ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এমটিবি থেকে ২৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা মাসিক বেতনসহ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশের সব তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে সর্বাধিক বেতন উত্তলনকারী এমডি ও সিইও।

এদিকে, এমটিবি তার শেয়ারহোল্ডারদের ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ সমাপ্ত বছরে ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে। আগের বছরও ব্যাংকটি ঠিক এমনই লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) এমডি ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি ২০২১ সালে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেতন পেয়েছেন, যা গত বছর ছিলো ২ কোটি ৬৩ লাখ।

তিনি এখন প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে ২৩ লাখ ৭ হাজার টাকা বেতন পান, যা আগের বছরের তুলনায় বার্ষিক বেতনের ৪ শতাংশ বেশি।

যদিও, ইবিএল শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তার লভ্যাংশ ১০ শতাংশ কমিয়েছে। ২০২০ সালে, ব্যাংকটি মোট ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। যেখানে ব্যাংকটি ২০২১ সালে ২৫ শতাংশ লভ্যাংশের সুপারিশ করে।

তালিকাভুক্ত আরও তিনটি ব্যাংক একইভাবে তাদের সিইও ও এমডিদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে ২ কোটি টাকার বেশি দিচ্ছে।

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এআইবিএল) এর এমডি ও সিইওর বেতন আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ অপরিবর্তীত-ই রয়েছে।

এআইবিএলের এমডি এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরী ১৭ লাখ টাকা মাসিক বেতন ও সম্মানি পান।

একইভাবে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও এমডি মো: আরফান আলী মাসিক বেতন ও সম্মানি পাচ্ছেন ১৭ লাখ টাকা, সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাশরুর আরেফিন পাচ্ছেন ১৭ লাখ টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি এবং সিইও এম কামাল হোসেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। সাউথইস্ট ২০২১ সালে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

যদিও পাবলিকলি ট্রেড করা সব কোম্পানির রাজস্ব এবং ব্যয়ের বিবরণী অবশ্যই বছরের শেষে শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা অনুমোদিত হতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে, এমডি বা সিইওদের বেতন নির্ধারণের বিষয়টি বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচনা করা হয় না।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “আমরা যতদূর জানি, পরিচালনা পর্ষদ অডিটর নিয়োগ এবং তার ফি, সেইসাথে এমডি বা সিইও নিয়োগের অনুমোদন দেয়।”

তিনি বলেন, “যেহেতু বেশিরভাগ ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, তাই কিছু ব্যাংক কেন তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এতো বেশি বেতন দিচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এটি এমন একটি বিষয় যা বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনের জন্য প্রথমে বোর্ড সিনিয়রদের সাথে আলোচনা করা উচিত।”

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোড একটি নমিনেশন এবং রেমিউনারেশন কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা দেয়, যাতে কর্মচারীদের বেতন তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকের জন্য এ কোড প্রয়োগ করে না বলে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বেতনে অসঙ্গতি থেকে যাচ্ছে।”

এদিকে, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস-উল ইসলাম দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “এমডিদের বেতন তাদের যোগ্যতা এবং ব্যাংকের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা দ্বারা নির্ধারিত হয়। অগ্রণী ব্যাংকের এমডির বেতন ছিল ১১ লাখ টাকা, এখন তা ৪ লাখ টাকা।”

১৫টি ব্যাংকের মধ্যে চারটি তাদের এমডি ও সিইওদের ভালো পরিমাণে বেতন দেয়। এমডি এবং সিইওদের বেতন বাড়ানো হলেও কর্মচারীদের বেতন কমিয়েছে এসব ব্যাংক।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক আগের বছরের তুলনায় ২০২১ সালে বেতন-ভাতা ব্যয় ১.৪ শতাংশ কমিয়েছে, তবে এমডির বেতন ৫ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে ব্যাংকটি।

এদিকে, পাবলিকলি তালিকাভুক্ত না হওয়া মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড বেতন ভাতা ১২ শতাংশ কমিয়েছে, অন্যদিকে তার এমডির বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে ১২ শতাংশ। ব্যাংকের এমডি ও সিইও আহসান উজ জামানকে বছরে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা মাসে ১৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছে ব্যাংকটি।

উত্তরা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকেরও একই অবস্থা।