প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ব্যাংকে ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক, দ্বিতীয় প্রান্তিকে দ্বিগুণ

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:৫৬:৫৩ | আপডেট: ৩ years আগে
ব্যাংকে ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক, দ্বিতীয় প্রান্তিকে দ্বিগুণ

মেহেদী হাসান

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ফের ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক পড়েছে ব্যাংকগুলোতে। যে কারণে আগের প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বেড়েছে ১১৬.৩৬ শতাংশ।

এপ্রিল ও জুনের ২ লাখ ৯১৫.২২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়, ব্যালেন্স শিট পরিষ্কার করতেই এমনটা করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পুনর্নির্ধারিত মোট অর্থের মধ্যে ৪৫৭.৩৬ কোটি টাকা, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৫৯৭.৯৭ কোটি টাকা, বিদেশি ব্যাংকগুলো ২৩.৮৯ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ৮৩৬ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি ও মার্চ প্রান্তিকে ঋণের পুনঃতফসিলের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৭.৩৬ কোটি টাকা।

যদিও, ব্যাংকের চেষ্টা সত্ত্বেও ব্যাংকিং সক্টরের নন-পারফরমিং লোন কমেনি। কারণ, গত জুন প্রান্তিকের তিন মাসে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এনপিএল বেড়েছে ৩ হাজার ৮৯৯.১২ কোটি টাকা।

ঋণ গ্রহীতারাও ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ স্থগিতকরণ সুবিধা ভোগ করছেন।

গত ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোনো ঋণ গ্রহীতা চলতি বছরের ঋণের কিস্তির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেন, তাহলে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ খেলাপি হবেন না।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি বলেন, যেহেতু কয়েক মাসের মধ্যে ব্যাংকের ক্লোজিং হবে, তাই ব্যাংকগুলিও খেলাপিদের কাছ থেকে তাদের অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে।

এছাড়া, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধাও দিচ্ছি, বলেন মির্জা ইলিয়াস।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ স্থগিত সুবিধার করণে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল আগের বছর থেকে নেমে আসে ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায়।

ঋণগ্রহীতারা গত বছর ঋণের কিস্তিতে স্থগিতাদেশ সুবিধা ভোগ করেছিলেন, এখনও তারা শর্তসাপেক্ষে ঠিক একই সুবিধা ভোগ করছেন।

দ্য বিজনেস পোস্ট এর সাথে আলাপকালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মন্দ ঋণ আদায়ের পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল করছে। কারণ, বর্তমান মহামারির কারণে ভবিষ্যৎ মন্দ ঋণ আদায় খুবই অনিশ্চিত।

তিনি বলেন, কিছু ব্যাংক তাদের অর্থ প্রবাহের ওপর নির্ভর করে তাদের মন্দ ঋণের পুনঃতফসিল করে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন ঋণ গ্রহীতারাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে তাদের মন্দ ঋণের পুনঃতফসিল করতে আগ্রহী। কারণ, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুবিধা দিয়ে নির্দিষ্ট একটি সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্দ ঋণের পুনঃতফসিল ব্যাংকগুলোকে শিট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এ ধরনের কার্যক্রমকে সাময়িক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটি মোটেও খুব ভাল কাজ নয়।

মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলো তাদের মুনাফা অর্জনের জন্য তাদের খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল করতে আগ্রহী। কারণ, তাদের পুনর্নির্ধারিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখা প্রয়োজন।

তার মতে, মন্দ ঋণ দাতারা তাদের মন্দ ঋণকে নিয়মিত করে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেন।

ব্যবসায়ীরা তাদের মন্দঋণের পুনঃতফসিল নির্ধারণ করে মাত্র ৪ বা ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিপরীতে খেলাপি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, অনেক অনৈতিক ঋণগ্রহীতা পুনঃতফসিল সুবিধাটি বারবার গ্রহণ করেন এবং তারা আরও ঋণ নেওয়ার জন্য সুবিধার অপব্যবহার করে থাকেন।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বাড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ পুনঃতফসিলের বিষয়ে ব্যাংকগুলো নতুন নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশেষ নীতিমালার অধীনে, খেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট করে ৯ শতাংশ সুদের হারে ১ বছরের অতিরিক্ত সুযোগসহ ১০ বছরের জন্য তাদের মন্দ ঋণকে নিয়মিত করার সুযোগ পেয়েছে।

ফলে, ২০১৯ সালে রেকর্ড ৫০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকার মন্দ ঋণের পুনঃতফসিল করা হয়।