প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় আইনের দুর্বলতার পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে: ডিএনসিআরপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৪:৫৪ | আপডেট: ৪ মাস আগে
ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় আইনের দুর্বলতার পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে: ডিএনসিআরপি

দেশের ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সবচেয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) কাজে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আগামী ১৫ মার্চ ২০২৪ বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম অবহিতকরণ ও প্রচারের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের সাথে সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চাইলেও ব্যবসায়ীদের অপরাধ অনুসারে তাদের শাস্তি দিতে পারি না। যতটা জরিমানা করা দরকার ততটা করতে পারি না। কারণ ভোক্তা অধিকার আইনের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা আইনে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের জনবল সংকটও রয়েছে, ১৭টি জেলায় অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা নেই। তারপরও সারাদেশে প্রতিদিন অধিদপ্তরের ৪০-৫০টি টিম দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে অবৈধ মজুদদারদের ধরতে একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল আলম এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সেমিনারে ডিএনসিআরপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অধিদপ্তর সচেতনতার অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবস পালন করে আসছে। কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল (সিআই) কর্তৃক ১৫ মার্চ ২০২৪ বিশ্ব ভোক্তা-অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘Fair and responsible AI for consumers’ স্মার্ট বাংলাদেশের সাথে এ বছরের প্রতিপাদ্যটি সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে।

সফিকুজ্জামান বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে SCMS (Supply Chain Monitoring System) শীর্ষক একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এ সকল পণ্যের অবৈধ মজুদ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য একটি গুরুত্বপূণ বিষয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রধান্য পায়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাতে অধিদপ্তর নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

সেমিনারে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, ‘বর্তমানে জনবান্ধব ও মিডিয়াবান্ধব একটি দপ্তর হচ্ছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।’ এক্ষেত্রে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করার কথা বলেন। তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা/পুরস্কার প্রদান করা এবং অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তাকে ঝুঁকিভাতা প্রদান করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

আলোচনায় দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাইনুল আলম শুরুতে একটি সুপারশপের ভোক্তা ঠকানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। তারা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঠকলে অধিদপ্তরে প্রাতিকার চায়। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম অধিদপ্তরকে অনেক বেশি চেনেন। অধিদপ্তর সামগ্রিক কার্যক্রমের জন্য খুব দ্রুত পরিচিতি পাচ্ছে।’ জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণা যোগাতে অধিদপ্তরের স্বীকৃতি আসবে বলে তিনি মনে করেন। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যম অধিদপ্তরের সাথে একযোগে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। ভোক্তা হয়রানির প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সাংবাদিকরা তাদের লেখনির মাধ্যমে প্রতিবাদ করে থাকে।’ তিনি ই-কমার্স সেক্টরে ভোক্তা হয়রানির প্রেক্ষিতে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে এই সেক্টরে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে অধিদপ্তরকে আরো তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।