পোশাক খাতে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত চার বছরে মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের জীবন সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পোশাক শ্রমিকদের আশা ছিল, ২০২২ সালে সরকার মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে ত্রি-পক্ষীয় আলোচনা শুরু করবে বা গার্মেন্টস মালিকরা নিজ থেকে সরকারকে অনুরোধ করবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। শ্রমিক বাঁচলো কি মরলো, তাতে সরকার বা মালিকদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বর্তমানে লিভিং ওয়েজ, এশিয়ান ফ্লোর ওয়েজসহ বিভিন্ন নামে মজুরির ক্যাম্পেইন চলমান আছে, যা ক্যালকুলেশন করলে আমাদের দাবিকৃত মজুরির দ্বিগুণ হবে। তাই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, শিল্পের সামর্থ্যসহ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৮ দফা দাবি জানাচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনটি উত্থাপিত দাবিগুলো হলো— ৭ম গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য ৬৫ ভাগ মূল মজুরিসহ ২২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ; জানুয়ারি-২০২৩ এর মধ্যে মজুরী বোর্ড পুনর্গঠন; সাম্প্রতিক বাংলাদেশ শ্রমবিধিমালায় সন্নিবেসিত শ্রমিক স্বার্থ-বিরোধী বিধিসমূহ বাতিল পূর্বক নতুন বিধিমালা প্রণয়ন; বাংলাদেশ শ্রম আইন চলমান সংশোধনী প্রক্রিয়ায় শ্রমিক সংগঠন সমূহের প্রস্তাবনা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে একটি শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন প্রণয়ন; ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় শ্রম অধিদপ্তরের বে-আইনি হস্তক্ষেপ বন্ধ করাসহ ইউনিয়ন গঠনে ২০ ভাগ শ্রমিকের অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা বাতিল করে যে কোনো শিল্পে বা প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০ জন শ্রমিক দ্বারা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের আইন প্রণয়ন; ভুর্তুকিমূল্যে শ্রমিক পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, শিশুখাদ্য রেশন হিসেবে প্রদান; বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সরকারি সান্ধ্যকালীন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন; সরকারি চাকরিজীবী মায়েদের মতো বেসরকারি শিল্পের মায়েদের ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ সুবিধাদী শ্রম আইনে সন্নিবেশ করা।
সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যেক শিল্প এলাকায় আঞ্চলিক শ্রমিক সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয় গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পাশাপাশি ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়।
এসব কর্মসূচি পালনের পরও দাবি আদায় না হলে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশ থেকে শিল্পখাতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিক নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিডব্লিউইউসির চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এম. দেলোয়ার হোসেন, মো. মাহতাব উদ্দিন সহিদ, যুগ্ম মহাসচিব বজলুর রহমান বাবলু, আব্দুল আজিজ, ফিরোজা বেগম, অর্থ সম্পাদক তাহমিনা রহমান প্রমুখ।