চলতি অর্থবছর আয় কমে যাওয়ায় কম ডিভিডেন্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো।
পুঁজিবাজারে চলমান মন্দাভাব এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আয় কমে যাওয়ায় মিউচুয়াল ফান্ডের অ্যাসেট ম্যানেজাররা ২০২১-২২ হিসাববছরে ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারেনি।
চলতি হিসাব বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২০ টি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৬ টি ফান্ড কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, দুটি ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এবং অন্য দুটি গতবছরের সমপরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ।
এদিকে, ২০ টি ফান্ডের মধ্যে, ১৯ টি ফান্ডের ইউনিট প্রতি আয় (EPU) চলতি হিসাববছরে আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই বাজারে অস্থিরতা মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর আয় বাড়া কমার হারকেও প্রভাবিত করে। এ কারণে চলতি বছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ইউনিটহোল্ডারদের জন্য কম লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে, ডিএসইএক্স সূচক ৫৪.১৮ শতাংশ রিটার্ন করেছে, যেখানে বাজারটি মাত্র ৩.৬৮ বাজারের রিটার্ন আমাদের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের আইনি ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান মনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, বাজারের রিটার্ন আমাদের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। আমাদের পোর্টফোলিওর ৮০ শতাংশের বেশি সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হয়। তা সত্ত্বেও, আমাদের মোট রিটার্ন এবং এনএভি ভিত্তিতে বা মূল্যের ভিত্তিতে আলফা উভয়ই বাজারকে ছাড়িয়ে গেছে।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, যেহেতু গত বছরের অক্টোবর থেকে বাজার নিম্নমুখী তাই তাদের ইউনিট প্রতি আয় কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গত ১০ বছরে, মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি বাজার পড়ে যায়, মিউচুয়াল ফান্ডগুলি কম পারফরম্যান্স করে এবং বিনিয়োগকারীদের স্থিতিশীল রিটার্ন দিতে পারে না।
ক্যাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজেশ সাহা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে পুঁজিবাজারের দর সংশোধন শুরু হয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত (১৪.৫ শতাংশ কমে) অব্যাহত ছিল। বাজারে পতনের ফলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির ইউনিট প্রতি সম্পদ এবং ইউনিট প্রতি আয় কমে যায়।
তিনি আরো বলেন, মূল বাজারে তালিকাভুক্ত আইপিওর সংখ্যা আগের বছরে ১৫ টি থাকলেও এ বছরে ছিল মাত্র ৯ টি। যার ফলে মূলধনী আয় কম হয়েছে।
দেশের পুঁজিবাজার ভালো থাকার কারণে গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে সবগুলো মিউচুয়াল ফান্ড ভালো মুনাফা করেছিল এবং ভালো ডিভিডেন্ডও ঘোষণা করেছিল।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৬ টির মধ্যে ২৭ টি ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিহিত মূল্য এবং নেট অ্যাসেট ভ্যালুর (এনএভি) নীচে লেনদেন হয়েছে, যা স্থানীয় এবং পোর্টফোলিও উভয় বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে।
সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ইউনিট প্রতি ১৯ টি ফান্ডের আয় কমেছে। এছাড়া ১৬টি এমএফ কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
তাদের মধ্যে, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ আয় ৯২.৭২ শতাংশ কমেছে। এ ফান্ডটি চলতি অর্থবছরে তার ইউনিটহোল্ডারদের জন্য ৬.৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা আগের বছরের ১৩ শতাংশ থেকে কম।
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ ৯০.৫৫ শতাংশ কমে ০.২৪ টাকা হয়েছে। ফান্ডটি চলতি অর্থবছরে তার ইউনিটহোল্ডারদের জন্য ৭ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা আগের বছরের ১৩ শতাংশ থেকে কম।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ আগের বছরের তুলনায় ৮৮ শতাংশ কমেছে। এজন্য গত অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫ শতাংশ কমিয়ে চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
এছাড়াও ইউনিটপ্রতি আয় কমেছে সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ০১, গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, AIBL ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী টাইগার লাইফ গ্রোথ ফান্ড. এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক ১ম মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড।
এছাড়া, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ১ম মিউচুয়াল ফান্ডের ইপিইউ আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ৫৬.২৫ শতাংশ বেড়েছে। ইউনিটহোল্ডারদের জন্য, এ ফান্ডটি ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছরে এর পরিমাণ ছিল ৬ শতাংশ।
অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ডের জনপ্রিয়তার পেছনে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা।
কারণগুলো হলো- আর্থিক স্বাক্ষরতার অভাব, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ক্রয়/বিক্রয় করার সহজ উপায় না থাকা, নির্দিষ্ট আয় কেন্দ্রীক ফান্ডের অভাব, সম্পদ এবং খাত বরাদ্দের জন্য কঠোর বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা, প্রচারের অভাব, এবং বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি।