প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিয়েতনামের পোশাক আটকে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

আরিফুর রহমান তুহিন
২৩ মে ২০২৩ ১৮:২৯:১৬ | আপডেট: ২ years আগে
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিয়েতনামের পোশাক আটকে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ
ভিয়েতনামের এই পোশাকি তৈরীর কারখানা। ছবি: এএফপি

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উৎপাদিত তুলা থেকে পণ্য তৈরির অভিযোগে কয়েকমাস ধরে ভিয়েতনামের বেশ কিছু চালান আটকে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে দেশটির পোশাক এবং জুতা প্রস্তুতকারকরা ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারীরা বলেছে, তারা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে এবং এমনকি এ থেকে কিছু বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাবে।

চীন জোরপূর্বক শ্রমের সাথে যুক্ত রয়েছে অভিযোগ করে ‘উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট’ (ইউএফএলপিএ) নামে একটি আইন পাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যা ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে কার্যকর হয়। এই আইনে মার্কিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াংয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে তৈরি পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করার অধিকতর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে চীনা কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে আটক করে রেখেছে এবং তাদের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনামের কিছু অসাধু উদ্যোক্তা চীনা ব্যবসায়ীদের তুলা ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে চীন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পারছে।

মার্কিন কাস্টমসের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইউএফএলপিএ চেকের জন্য তারা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক এবং জুতা চালান আটকে করে, যার ৮০ শতাংশেরও বেশি ভিয়েতনাম থেকে আসা। এছাড়া দেশটির রপ্তানি করা কার্গোগুলোর মাত্র ১৩ শতাংশ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও অনেক মার্কিন আমদানিকারক এখনও আশাবাদী।

তবে তাদের মধ্যে এই আশঙ্কাও রয়েছে যে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তাদের সরবরাহ চেইন ব্যাহত হতে পারে কেননা ভিয়েতনাম পোশাক তৈরির কাঁচামালের জন্য চীনের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে ভিয়েতনাম পোশাক রপ্তানিকারক এবং মার্কিন ব্র্যান্ডের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের সুতা ও কাপড় আমদানির বড় একটি অংশ চীন থেকে আসে তাই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশটির ব্যবসায়ীদের মধ্যেও কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি দ্য বিজনেস পোস্টের কাছে দাবি করেছেন, দেশের সব ব্যবসায়ীরাই জিনজিয়াং তুলার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অবগত আর এ কারণে তারা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন।

তিনি বলেন,‘ইউএফএলপিএ আইন পাশ হওয়ার পরপরই সদস্যদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি যে, তারা সুতা কিংবা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে এর উৎস সম্পর্কে জেনে নেয়, হোক সেটা চীন থেকে আমাদানি করা বা অন্য কোনো দেশ থেকে ।’

তিনি দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনামের কাপড় জব্দ করায় বাংলাদেশ সুবিধা পাবে কারণ ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানিতে মার্কিন ক্রেতাদের আস্থা কমে যাবে।’

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ তার তুলার চাহিদার ৯৯ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে, এবং এতে চীনের সামান্য অংশ থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশের কাপড় আমদানির ৫৯ শতাংশ চীনের দখলে। এছাড়াও বাংলাদেশ তার বার্ষিক সুতার চাহিদার ১২ শতাংশ চীন থেকে আমদানির করে।

পোশাক কারখানার মালিকরা জানিয়েছেন, তারা স্থানীয় উৎসের মাধ্যমে তুলার সুতার চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ পূরণ করে এবং বাকিগুলো ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশ থেকে আনে। চীনের থেকে আমদানির পরিমাণ এক শতাংশের নিচে। তারা বলছেন, চীন থেকে আমদানিকৃত সুতা ও তুলা মূলত নন-কটন। বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকেও কিছু তুলা থেকে তৈরি সুতা আমদানি করে, তবে সবসময় তুলার অরিজিন সম্পর্কে জেনে নেওয়া হয়।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হওয়ায় রপ্তানিকারকরা দেশটির আইন সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। এ কারণে ইউএফএলপিএ আইনের মুখোমুখি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলি শামীম এহসান বলেন, ‘আমরা আস্থা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং সবসময় আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি। এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা ক্রেতাদের আরও অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশে আসা উচিত কারণ অন্যরা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু আমরা তা করছি না।’