মিরাজ শামস
আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ক্রমশই বাড়তে থাকায় দেশে বেড়েছে রডের দাম। যে কারণে করোনা মহামারি ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই এখন আবারও দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়িদের যেন স্বপ্ন ভঙ্গের অবস্থা।
দেশে অন্যতম প্রধান এ নির্মাণ সামগ্রীটির দাম শনিবার প্রতি টন ছিল ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।
রড মিল মালিকরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির কারণে আগের বছরের তুলনায় এবার দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সাবেক সভাপতি তানভিরুল হক সমস্যাল দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, আমরা সমস্যায় আছি।
তিনি বলেন, স্থবির নির্মাণ খাত এখন ভয়ানক অবস্থায় ফিরে যাবে। রডের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এসকে মাসাদুল আলম মাসুদের মতে, বিশ্ববাজারে স্টিলের দাম বৃদ্ধি, দেশের বাজারেও রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাসুদ বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া-ই মূলত রডের দাম বৃদ্ধির কারণ। এছাড়াও, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম পরিবহন খরচও বাড়াচ্ছে, যা সামগ্রিক রডের দামের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে আহরিত লোহার দাম বৃদ্ধিতে রডের দাম আরও বাড়িয়েছে। ফলে রডের দাম বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের সমগ্র নির্মাণ প্রকল্প ও রিয়েল এস্টেট খাতে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জনতা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী, রড সরবরাহকারী মিন্টু মিয়া জানান, গত সপ্তাহে প্রতিদিনই সব ব্র্যান্ডের রডের দাম বেড়েছে।
এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রড বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।
দেশে প্রায় ১০০টি রড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস, বন্দর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আবুল খায়ের স্টিল, রহিম স্টিল মিলস, কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস, রতনপুর রিরোলিং মিলস, আনোয়ার ইস্পাত লিমিটেড এবং বায়েজিদ স্টিল ৬০ শতাংশ দেশীয় চাহিদা পূরণ করে।
এছাড়াও, জিপিএইচ ইস্পাত, কামাল স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস, রানি রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, এইচকেজি স্টিল মিলস লিমিটেড, এসএএস গ্রুপ, বিক্রমপুর স্টিল লিমিটেড এবং শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের মতো আরও কয়েকটি কোম্পানি দেশীয় চাহিদার বাকি অংশ পূরণ করে।
চাহিদা বেশি থাকায় বৈশ্বিক বাজারে লোহার স্ক্র্যাপের দাম উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এশিয়ান স্টিল স্ক্র্যাপ বাজারের মধ্যে বাংলাদেশে স্ক্র্যাপের দাম সবচেয়ে বেশি।
দেশে এটির দাম প্রতি টন ৫৭০ ডলার এবং বিশ্ববাজারে মূল্য ৪৫০ ডলার থেকে ৫৫০ ডলারের কাছাকাছি।
যেহেতু এখন নির্মাণ খাতের ব্যবসার মোক্ষম সময়, তাই মিলগুলো কাঁচামালের জন্য উচ্চ মূল্য পরিশোধ করলেও স্ক্র্যাপের গুরুতর সংকটে পড়ছে।
রিয়েল এস্টেট সেক্টরের উদ্যোক্তারা বলেন, লোহার ক্রমবর্ধমান ব্যয় তাদের ব্যবসায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে, নির্মাণ খরচ বাড়াচ্ছে।
তথ্যানুযায়ী, এক বর্গফুট ভবন নির্মাণে ৬ কিলোগ্রাম রডের প্রয়োজন হয়। গত বছরের তুলনায় এবার রডের দাম কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা।
এছাড়াও, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য লোহার সামগ্রীর দামও প্রতি বর্গফুটে বেড়েছে ২৫০ টাকা।