সালেহ নোমান, চট্টগ্রাম
সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার থেকে অন্তত ৪ হাজার টিইইউ শিপিং কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। এতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন রপ্তানিতে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
রোববার রপ্তানি পণ্য বহনকারী কোনো জাহাজ বন্দর ছেড়ে যায়নি। জাহাজগুলো সোমবারও নির্ধারিত পণ্য নিয়ে বন্দর ছাড়তে পারবে কি না, তাও নিশ্চিত নন বন্দরের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) সেক্রেটারি রুহুল আমিন বিপ্লব বলেন, সড়কপথে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতি ঘণ্টায় বন্দরের পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
সরকার দূরপাল্লার রুটের বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২.১৫ টাকায় বাড়ানোর পর রোববার সন্ধ্যায় বাস অপারেটররা অবিলম্বে তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পণ্য পরিবহনকারীরা এ ধরনের কোনো ঘোষণা দেননি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, অচলাবস্থার এখনই সমাপ্তি দরকার, অন্যথায় কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা কাটাতে পোশাক শিল্পের যে পুনরুদ্ধার, তা থমকে যাবে।
তিনি বলেন, ধর্মঘট চলতে থাকলে রপ্তানি বাণিজ্যে বিপর্যয় ঘটবে। এ ধরনের জিম্মি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বেআইনি।
বিজিএমইএ ও শিপিং সেক্টরের স্টেকহোল্ডাররা বলছেন, প্রতি বছর বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক পণ্য রপ্তানি করতে ব্যর্থ হলে ক্রেতারা সময়মতো এসব পণ্য বাজারজাত করতে পারবে না।
যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠানো না হয়, তাহলে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট সিঙ্গাপুর এবং কলম্বোতে জাহাজ না পাওয়ার কারণে অন্তত ১০-১৫ দিন পর এসব পণ্য গন্তব্যে পৌঁছাবে।
আজ বন্দর ছাড়বে ৫টি জাহাজ
সোমবার অন্তত পাঁচটি জাহাজ রপ্তানি চালান নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে, তিনটি জাহাজ- এএস সিসিলিয়া, স্পিরিট অফ ব্যাংকক এবং এক্সপ্রেস লোটসে রোববার সকালে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, তবে তারা এখনও নির্ধারিত চালানের ডেলিভারি পায়নি।
জাহাজগুলো এখনও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাবারের মতো রপ্তানি পণ্য না পাওয়ায়, আরও ২৪ ঘন্টা বন্দরে অবস্থান করবে।
এ তিনটি জাহাজের পাশাপাশি কালামোতি ট্রেডার এবং এসওএল হিন্দ নামে দুটি জাহাজ সোমবার বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটের এএস সিসিলিয়া ফিডার ভেসেলের শিপিং এজেন্ট ক্রাউন শিপিং লাইন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আলী হোসেন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম যে রোববার ধর্মঘট শেষ হবে, তাই এসএ সিসিলিয়া বন্দরে বাড়তি একদিন অবস্থান করছিল।
তিনি বলেন, ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে আমাদের এখানে থাকার কোন কারণ নেই।
জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অপারেশন প্রধান - এসওএল হিন্দের শিপিং এজেন্ট মুনতাসির রুবায়াত বলেছেন, আমাদের সময়সূচি সোমবার ছাড়ার জন্য নির্ধারিত হলেও রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার এখনও আসেনি। জাহাজটি ছেড়ে যাবে নাকি আরও থাকবে তা স্পষ্ট নয়।
বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ মালিকদের বন্দরে তাদের থাকার মেয়াদ বাড়াতে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে, যা কমপক্ষে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ডলার। এ ছাড়া, কোনো জাহাজ অতিরিক্ত দিন বন্দরে অবস্থান করলে জাহাজ মালিককে অন্যান্য চার্জও দিতে হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সচিব ওমর ফারুক বলেন, শিপিং এজেন্টরা যদি তাদের জাহাজগুলোকে বন্দরের জেটিতে অপেক্ষা করাতে চায়, তারা তাদের কন্টেইনার লোড না হওয়া পর্যন্ত তা করতে পারে।
তিনি বলেন, এখন বন্দরের বাইরের নোঙরে ছয়টি কন্টেইনার জাহাজ অপেক্ষা করছে এবং রোববার পর্যন্ত জাহাজগুলোকে নোঙর করার জন্য পর্যাপ্ত জেটি রয়েছে।
‘পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই’
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট পালন করেন। সোমবার বাস সংশ্লিষ্টরা পুনরায় সারা দেশে বাস চালানো শুরু করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মালবাহী পরিবহন বন্ধ ছিল।
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-প্রাইম মুভার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আলম বলেন, যদিও সরকারি কর্মকর্তারা গণপরিবহন মালিকদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু মালবাহী মালিকদের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা এখনো হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রায় ৪৯ হাজার টিইইউএস ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বন্দর ইয়ার্ডে রোববার পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার জমা হয়েছে। এছাড়াও, বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোতে এখন তাদের ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার টিইইউএস’র বিপরীতে প্রায় ৫১ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার রয়েছে।
সব ধরনের রপ্তানি পণ্যের প্রি-শিপিং ১৯টি আইসিডিতে করা হয়, যা ৩৬ ধরনের আমদানি করা পণ্যের পোস্ট-শিপমেন্টও পরিচালনা করে।