প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাব

রপ্তানির ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক আটকা

০৮ নভেম্বর ২০২১ ১১:২০:১৭ | আপডেট: ৩ years আগে
রপ্তানির ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক আটকা

আরিফুর রহমান তুহিন

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের পর শুক্রবার থেকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কারখানাগুলোতে আটকা পড়েছে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক। 

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার জন্য জরুরি প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামালও চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়েছে, যা খালাস এবং তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে প্রতিদিন প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য আটকে যাবে। শিল্প নেতারা সতর্ক করে বলেন, যদি এসব পণ্য নির্ধারিত পণ্যবাহী জাহাজে সময় মতো না পৌঁছায়, তবে জাহাজগুলো রপ্তানি চালানের জন্য অপেক্ষা করবে না।

রপ্তানিকারকদের তখন তাদের চালান এয়ার কার্গোর মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে, যা অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে এবং শত শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।

সরকার দূরপাল্লার রুটের বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২.১৫ টাকা বাড়ানোর পর রোববার সন্ধ্যায় বাস অপারেটররা অবিলম্বে তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।

কিন্তু রোববার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পণ্য পরিবহনকারীরা এ ধরনের কোনো ঘোষণা দেননি।

নিজেদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই আমরা অনেক কষ্ট করে আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।

কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট এবং জ্বালানির নতুন দাম আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং বন্দর থেকে কাঁচামাল ছাড়তে পারছি না। আমরা সবদিক থেকেই চাপে আছি।

তিনি আরও বলেন, নতুন জ্বালানীর দাম তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে এবং পরিবহন ধর্মঘট তাদের চালানের সময়সীমা মিস করতে পারে। আজিম বলেন, সরকারের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো যুক্তি নেই।

বিজিএমইএ-এর তথ্যানুসারে, আরএমজি সেক্টর নভেম্বরে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য রপ্তানি করবে এবং এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে তাদের প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি প্রয়োজন।

এ বিষয়ে এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও শিল্প নেতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সময়ের মধ্যে চালান রপ্তানি করতে না পারায় গত তিন দিন ধরে রপ্তানি খাত মারাত্মক চাপে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে রপ্তানিকারকসহ পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের চালানের সময়সীমা আছে এবং যদি আমরা ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে চালান সম্পন্ন করতে না পারি, তাহলে ক্রেতারা আমাদের এয়ার কার্গো ডেলিভারির জন্য বলবে, এটা আমরা কুলাতে পারি না।

সরকারের উচিত স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে এ সংকট সমাধান করা, অন্যথায় পোশাক রপ্তানিকারকদের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলেও মনে করেন কুতুবউদ্দিন।

বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, জুলাই মাসে পূর্ববর্তী লকডাউনের কারণে তারা শিপমেন্ট সরবরাহ করতে দেরি করেছিল, তখন কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছিল ক্রেতারা।

তবে চলমান সংকট একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা হওয়ায়, ক্রেতারা আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন সময়মতো পণ্য পৌঁছে দিতে।

বিজিএমইএর পরিচালক ও নিপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খসরু চৌধুরী বলেন, পরিবহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমরা কিভাবে সময়মত আমাদের চালানের সময়সীমা পূরণ করব? এছাড়া ধর্মঘটের কারণে কাঁচামালের ঘাটতির কারণে যেভাবেই হোক আমাদের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে।

পোশাক রপ্তানিকারকরা আরও দাবি করেন, দ্রুত পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে বন্দরটি দীর্ঘ দিনের কনটেইনার জটে পড়বে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের প্রধান সমুদ্রবন্দর, সেখান থেকে আমরা বেশিরভাগ পণ্য আমদানি করি। প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল এখন ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছে এবং সেগুলির জন্য আমাদের অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। নতুন জ্বালানির দাম এবং পরিবহন ধর্মঘট শুধু আমাদের নয়, সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে।

চলমান সঙ্কট নিরসনে সরকারের উচিত পরিবহন মালিক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করা এবং বিজিএমইএ এ উদ্দেশ্যে সভা ডাকতে পারে বলেও মনে করে ফয়সাল সামাদ।